মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাত পোহালেই রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election 2023)। বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার-পর্ব। এবার শনিবার ভোটগ্রহণ। ভোটের দিন ঘোষণা হওয়া ইস্তক রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক হিংসার পালা। মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে এই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন প্রান্তে হিংসা, হানাহানি, রক্তপাতের সাক্ষী থেকেছে গোটা বাংলা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩০ দিনে রাজ্যে প্রাণ গিয়েছে ১৮ জনের।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, রাজ্যে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election 2023) আবহে ভোট পূর্ববর্তী হিংসায় কত প্রাণ অকালে ঝরে পড়েছে—
ভোট-পূর্ববর্তী হিংসায় মৃত্যুর খতিয়ান
৯ জুন: মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন করা হয় কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখকে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তোলে কংগ্রেস।
১৫ জুন: মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে ভাঙড়ে খুন হন আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা ও ২ তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লা ও রাজু নস্কর। ওই দিনই মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মোজাম্মেল শেখকে পিটিয়ে ও গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
১৭ জুন: কোচবিহারের দিনহাটায় বিজেপি প্রার্থীর দেওর শম্ভু দাসকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ছুরি মেরে খুন করা হয়। ওইদিনই মালদার সুজাপুরে পিটিয়ে মারা হয় তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান মোস্তাফা শেখকে।
২১ জুন: ১৫ জুন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বাম-কংগ্রেসের মিছিলে গুলি চলে। গুলিবিদ্ধ হন ২১ বছরের সিপিএম কর্মী মনসুর আলম। ২১ তারিখ তাঁর মৃত্যু হয়।
২২ জুন: পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রায় পয়েন্ট ব্ল্যঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূলের টাউন সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবেকে।
২৪ জুন: মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুষ্কৃতী আলিম বিশ্বাসের।
২৭ জুন: কোচবিহারের দিনহাটার গীতালদহে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জারি ধরলা গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তৃণমূল কর্মী বাবু হকের।
১ জুলাই: দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ গ্রামে গুলি করে খুন করা হয় যুব তৃণমূল কর্মী জিয়ারুল মোল্লাকে। পঞ্চায়েতের টিকিট নিয়ে তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের কোন্দলে খুন বলে অভিযোগ ওঠে।
৩ জুলাই: ভোরে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার শালিপুরে বোমা বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয় তৃণমূল কর্মী পরিতোষ মণ্ডলের।
৪ জুলাই: উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার গাঙাটি গ্রামে বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় ১৭ বছরের তৃণমূল সমর্থক ইমরান হোসেনের। আইএসএফ ও সিপিএম সমর্থিত নির্দলদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে।
৫ জুলাই: মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুষ্কৃতী কামাল শেখের। ওই দিনই বীরভূমের মহম্মদবাজারে দিলীপ মাহারা নামে বিজেপি নেতাকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
৬ জুলাই: ৩ জুলাই কুলপির দক্ষিণ গাজিপুরে আলফাজ হালদার নামে এক কংগ্রেস নেতা আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রচারের সময় তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তারপর কলকাতায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ৬ তারিখ তাঁর মৃত্যু হয়।
৭ জুলাই: মুর্শিদাবাদের রানিনগরের রায়পুর গ্রামে অরবিন্দ মণ্ডল নামে কংগ্রেস কর্মী খুন। পিটিয়ে খুনের অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা কংগ্রেসের ওপরেই হামলার অভিযোগ করে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: জটিলতা এড়াতে ত্রিস্তরে ৩ রঙের ব্যালট পেপার, কী কী সেই রং?
ভোটের দিন হিংসা বন্ধ হবে কি?
পঞ্চায়েত ভোটকে (Panchayat Election 2023) কেন্দ্র করে রাজ্যে লাগামছাড়া হিংসা ও সন্ত্রাসের বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিরোধী দলগুলি। আদালতও, ভোট-হিংসা রুখতে রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোট করানোর নির্দেশ। অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু, এত কিছুর পরও কি হিংসা বন্ধ হবে? কেউ কি নিশ্চিত করে বলতে পারে যে শনিবার রক্ত ঝরবে না এ বাংলার বুকে!
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours