Swasthya Sathi: স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলেও ভর্তি নিচ্ছে না বহু বেসরকারি হাসপাতাল! ভোগান্তি চরমে

স্বাস্থ্য সাথীর (Swasthya Sathi) আওতায় রোগী ভর্তি করাতে হবে জেনেই বেঁকে বসল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!
Swasthya_Sathi_(1)
Swasthya_Sathi_(1)

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

নিখরচায় চিকিৎসা তো দূর অস্ত! স্বাস্থ্য সাথী (Swasthya Sathi) কার্ড রয়েছে জানতে পারলেই বেসরকারি হাসপাতাল মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। রোগী ভর্তি পর্যন্ত করছে না। এমনই অভিযোগ উঠছে শহরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ফলে স্বাস্থ্য সাথী নিয়ে ভোগান্তিতে রোগী ও তাঁর পরিজনেরা।

কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? 

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, শুধু সরকারি হাসপাতালেই নয়। বেসরকারি হাসপাতালেও বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন রাজ্যবাসী। সেজন্য স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প চালু করা হয়। চিকিৎসা খরচ বাবদ পরিবার পিছু পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থেকে যে কোনও মানুষ চিকিৎসা করাতে পারেন। স্বাস্থ্য সাথী (Swasthya Sathi) কার্ড থাকলে, তাঁর চিকিৎসার খরচের পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রাজ্য সরকার ব্যয় করবে। তাঁকে কোনও খরচ দিতে হবে না।

অভিযোগ কী?

স্বাস্থ্য সাথী (Swasthya Sathi) কার্ড নিয়ে একাধিক জায়গায় রোগী ভোগান্তির অভিযোগ উঠছে। রোগী ও পরিবারের একাংশের অভিযোগ, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলে বেসরকারি হাসপাতাল ভর্তি নিতেই চাইছে না। সম্প্রতি বেলঘরিয়ার বছর সত্তরের অনিতা বসুর স্ট্রোক হয়। তাঁকে প্রথমে পার্ক সার্কাসের একটি নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্য সাথীর আওতায় রোগী ভর্তি করাতে হবে জানার পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেঁকে বসে। তারা জানায়, আপাতত ওখানে চিকিৎসার সুযোগ নেই। অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হবে।এরপরে পরিবার অনিতাদেবীকে বাইপাসের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানেও একই রকম অভিজ্ঞতা হয়। এরপরে তাঁকে স্থানীয় এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বিপুল অর্থ ব্যয় করেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। 
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের (Swasthya Sathi) আওতায় অস্ত্রোপচার করানোর কথা জানার পরেই আর দিন জানানো হচ্ছে না হাওড়ার সুদর্শন হালদারকে। তিনি জানান, গলব্লাডারে স্টোনের সমস্যা নিয়ে মাসখানেক আগে বাইপাসের একটি প্রথম সারির হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সবরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও তাঁর স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আওতায় চিকিৎসা হবে জানার পরেই টালবাহানা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁর অভিযোগ, বারবার যোগাযোগ করলেও কবে অস্ত্রোপচার করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছুই জানাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কতদিন? তার কোনও উত্তর নেই। এদিকে পেটের যন্ত্রণা ও অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা বাড়ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেয়ে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও ভোগান্তি অব্যাহত। সূত্রের খবর, সুদর্শন হালদার বা অনিতা বসু কোনও ব্যতিক্রম নন। স্বাস্থ্য সাথীর ভোগান্তির তালিকা দীর্ঘ। 

কী বলছে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? 

বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ভর্তি না করার অভিযোগ অস্বীকার করছে। কিন্তু স্বাস্থ্য সাথীর (Swasthya Sathi) আওতায় থাকা রোগীদের পরিষেবা দিতে যে তাদের অসুবিধা হচ্ছে, তা তারা স্বীকার করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাপোলো হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, পরিষেবা দিলেও সরকারের কাছ থেকে সময় মতো টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। বিল মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। এভাবে হেলথ ইন্ডাস্ট্রি চালানো মুশকিল। স্বাস্থ্য ভবনে বারংবার জানিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে সাফ জানিয়েছেন আমরি হাসপাতালের এক কর্তা। তিনি বলেন, "সরকার তৃতীয় একটি মাধ্যমের সাহায্যে আগে স্বাস্থ্য সাথীর বিল মেটাত। তার ফলে অনেকটা সময় লাগত। স্বাস্থ্য দফতরে জানানোর পরে বলা হয়,  এরপর থেকে সরকার সরাসরি বেসরকারি হাসপাতালকে টাকা দেবে। কিন্তু তারপরেও টাকা পেতে অনেক দেরি হয়। কোটি কোটি টাকার পরিষেবা এভাবে দেওয়া যায় না। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই অনীহা তৈরি হয়।" বেসরকারি হাসপাতাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে এত বড় পরিকাঠামো গড়ে তোলেনি, স্পষ্ট বলেন মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এক কর্তা। তিনি বলেন, "সরকার সহযোগিতা না করলে, স্বাস্থ্য সাথী সফল হবে না। আর রোগী হয়রানি বাড়বে।" তাছাড়া, সরকার যে টাকা অস্ত্রোপচারের জন্য নির্ধারিত করেছে, তাতে চিকিৎসকেরা পরিষেবা দিতে রাজি নন বলেই জানাচ্ছেন ওই কর্তা। তিনি বলেন, একদিনে একাধিক স্বাস্থ্য সাথীর আওতায় থাকা রোগীর অস্ত্রোপচার করতে রাজি হন না চিকিৎসকেরা। কারণ, তাঁরা ওই পরিষেবা দিয়ে যা পারিশ্রমিক পান, তা একেবারেই যথাযথ নয়। 

কী বলছে স্বাস্থ্য দফতর? 

স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, "স্বাস্থ্য সাথীর (Swasthya Sathi) জন্য কোনও বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ভর্তি নিতে চায়নি, এমন লিখিত অভিযোগ জমা পড়লে তদন্ত করা হবে।" তবে, স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য সাথীর একাধিক সমস্যা নিয়ে বারবার স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছে। সেগুলো সমাধানের পরিবর্তে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পকে নির্বাচনী প্রচার হিসাবেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই মানুষের ভোগান্তি চলছেই।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles