মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তাপমাত্রা (Weather Update) সব রেকর্ড তছনছ করে দিচ্ছে চলতি বছর। মঙ্গলবার কলকাতা স্পর্শ করল রেকর্ড তাপমাত্রা। কলকাতার তাপমাত্রা পৌঁছল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর গতকাল দুপুরে কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৪৪ বছর পরে এপ্রিলে এই জায়গায় পৌঁছেছিল পারদ। আজ তার থেকেও প্রায় ২ ডিগ্রি উঠে তৈরি হল এপ্রিলে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড। ১৯৮০ সালে এপ্রিলে শেষবার কলকাতার পারদ ছুঁয়েছিল ৪১.৭ ডিগ্রি। আগামী ৫ দিন তাপমাত্রার তেমন কোনও হেরফের হবে না। দেখা নেই কালবৈশাখীরও (Kalbaisakhi)। চৈত্র পার হয়ে বৈশাখের মাঝামাঝি হয়ে গেল। চলতি বছরে একদিনও ঝড়বৃষ্টি হয়নি।
কোথায় কালবৈশাখী
২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিল মিলিয়ে একটা কালবৈশাখীও হয়নি। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি (আইআইটিএম)-র তথ্য অনুযায়ী কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিল মিলিয়ে অন্তত ছ’টি এবং মে মাসে আরও ছ’টি — মোট ১২টি কালবৈশাখী হত। গত বছরও মে-র কলকাতা কালবৈশাখী (Kalbaisakhi) পেয়েছে পাঁচটি। এ ছাড়া ছ’সাত দিন ঝড়বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার অন্য চিত্র। মৌসম ভবনের হিসাব বলছে, এপ্রিলের কলকাতায় গড়ে অন্তত তিন দিন বৃষ্টি হয়। গড় বৃষ্টির পরিমাণ থাকে ৫৫ মিলিমিটার। তুলনায় এ বছরের এপ্রিলের হিসাব চমকে দেওয়ার মতো। কালবৈশাখী হয়নি। ছোটখাটো ঝড় হয়নি। বজ্রগর্ভ মেঘের দেখা নেই। ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছিল ৭, ৮ এবং ১১ এপ্রিল। এর মধ্যে ৭ তারিখই মাপার মতো। ০.৫ মিলিমিটার। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ৮ এবং ১১ তারিখ শুধু বোঝা গিয়েছে যে, বৃষ্টি হয়েছে। তার পর থেকে আর বৃষ্টির মুখ দেখেনি কলকাতা। ১১ তারিখের পর থেকে মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শুধুই গরম আর তাপপ্রবাহ। প্রতিদিন ঊর্ধ্বমুখী তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড ভাঙছে কলকাতা।
কেন হল না, লু-এর প্রভাব
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার উপ-মহাধ্যক্ষ সোমনাথ দত্ত বলেন, ‘উত্তর গোলার্ধে সমুদ্র থেকে বাতাস যখন কোনও দেশের মূল ভূখণ্ডে ঢোকে, তখন অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ়, অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার উল্টো ভাবে ঘুরতে শুরু করে। বঙ্গোপসাগরের যে হাওয়া দক্ষিণবঙ্গ দিয়ে ঢোকে, সেটা বাঁ দিকে বেঁকে ওড়িশার দিকে চলে যায়। তাই বাংলার পাশাপাশি ওড়িশাও কালবৈশাখীর (Kalbaisakhi) দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝড় শুরু হলে, হাওয়া পাশাপাশি পাক খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে মাটির এক কিলোমিটার উপর থেকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়াও গোঁত্তা খেয়ে অতি দ্রুত নীচে নামতে থাকে। এর ফলে অনেকটা জায়গার তাপমাত্রা কয়েক মিনিটের মধ্যে ১২-১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে যায়। অনেক সময়ে শিলাবৃষ্টিও হয়।’ কিন্তু গত ক’বছরে লু-এর প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উপর পর্যন্ত বাতাসের স্তর এতটাই গরম হয়ে উঠছে যে সেই উচ্চতায় মেঘ তৈরি হতে পারছে না বলেই বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ। সমুদ্রের বাতাসের জোর করে ঢোকার মতো শক্তি অর্জন করতে অতিরিক্ত প্রায় দু’মাস সময় লেগে যাচ্ছে। তাই মার্চ-এপ্রিলে ঝড়বৃষ্টির পরিমাণ অত্যন্ত কমে সবটাই মে-নির্ভর হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: সোমবার রাজ্যের উষ্ণতম ছিল কলাইকুন্ডা, কলকাতার তাপমাত্রা কত?
জলীয় বাষ্পের অভাব
আবহবিদদের (Weather Update) কথায়, জলীয় বাষ্পের অভাবের কারণে এবার কালবৈশাখীর (Kalbaisakhi) দেখা নেই। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অর্থাৎ বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭০-৮০ শতাংশের কাছাকাছি হলে তখন বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে তা বিক্ষিপ্তভাবে হবে। এই মুহূর্তে বায়ুমণ্ডলে দক্ষিণবঙ্গ-সহ ঝাড়খণ্ড, সমগ্র মালভূমি অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ২০ থেকে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। আবহবিদরা বলছেন, শহরাঞ্চলে গাছ, জলাশয় তো শেষ! গ্রামেও এক ছবি। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট হচ্ছে। গাছ কাটা পড়ছে, বোজানো হচ্ছে পুকুর। জলাশয় ধ্বংসের পাশাপাশি বনাঞ্চলও কমছে। উল্টে বাড়ছে কংক্রিটের জঙ্গল। জল-বনাঞ্চলের পরিমাণ না বাড়ানো হলে এই সমস্যা থেকে নিস্তার নেই। মে-এর ৫-৬ তারিখ এর আগে বৃষ্টি হবে না বলেই মত আবহবিদদের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours