শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় একাদশী হল বিজয়া একাদশী (Vijaya Ekadashi)। অর্থাৎ কৃষ্ণ পক্ষের একাদশী তিথি। নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। এবছর ১৬ ফেব্রুয়ারি পড়েছে এই তিথি। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, এই একাদশী তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ পূজার্চনা করা হয়ে থাকে। ভক্তদের বিশ্বাস, এই একাদশীতে (Vijaya Ekadashi) ভক্তি সহকারে পুজো করলে জয় লাভের পথ প্রশস্ত হয়। পাশাপাশি সমস্ত বাধা বিপত্তি থেকে মুক্তিও পাওয়া যায়।
চলতি বছরে বিজয়া একাদশী (Vijaya Ekadashi) তিথি কখন শুরু হচ্ছে
পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টা ৩২ মিনিটে একাদশী তিথি শুরু হবে এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ২টো ৪৯ মিনিট অবধি তা চলবে।
বিজয়া একাদশীর (Vijaya Ekadashi) দিন কী করবেন এবং কী করবেন না
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, এদিন জুয়া খেলা অনুচিত। বিশ্বাস মতে, এমন করলে ব্যক্তির বংশ নষ্ট হয়।
একাদশীর (Vijaya Ekadashi) রাতে ঘুমোতে নিষেধ করা হয়েছে শাস্ত্রে। সারা রাত জেগে ভগবান বিষ্ণুর মন্ত্র জপ করা উচিত।
শাস্ত্র অনুযায়ী, এদিন চুরি করলে পরবর্তী ৭টি প্রজন্ম সেই পাপের অংশীদার হয়ে পড়ে।
একাদশী (Vijaya Ekadashi) তিথিতে ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভের জন্য খাওয়া-দাওয়া ও ব্যবহারে সাত্ত্বিকতা রাখা উচিত। কর্কশ শব্দ ব্যবহার করে কারও সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। ক্রোধ ও মিথ্যাকথা এড়িয়ে চলা উচিত।
বিজয়া একাদশীর (Vijaya Ekadashi) দিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাওয়া উচিত।
বিজয়া একাদশীর (Vijaya Ekadashi) পৌরাণিক আখ্যান
পৌরাণিক গল্প অনুযায়ী, দ্বাপর যুগে কোনও একসময়ে ভগবান কৃষ্ণের কাছে ফাল্গুন একাদশী সম্পর্কে জানার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির। ফাল্গুন একাদশীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে, ‘হে কৌন্তেয়, নারদ মুনি সবার প্রথমে এই একাদশী সম্পর্কে জেনেছিলেন ব্রহ্মার কাছ থেকে। এরপর তোমাকে আমি এ সম্পর্কে অবগত করছি। এর সূত্রপাত ত্রেতা যুগে। সীতা হরণের পর রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সুগ্রীবের সেনার সঙ্গে লঙ্কার দিকে যাত্রা করেন রামচন্দ্র। কিন্তু লঙ্কা পৌঁছনোর আগেই বিশাল সমুদ্র তাঁদের পথ আটকে দেয়। রামচন্দ্র লক্ষ্মণের কাছ থেকে সমুদ্র পার করার উপায় জানতে চাইলে, লক্ষ্মণ বলেন, প্রভু আপনি সর্বজ্ঞ, তবে তা সত্ত্বেও জানতে চাইলেন, কিন্তু আমিও কোনও উপায় দেখছিনা। কিন্তু এখান থেকে কিছু দূরেই বকদালভ্য মুনির আশ্রম রয়েছে। তাঁর কাছে এর কোনও না-কোনও উপায় নিশ্চয়ই পাওয়া যেতে পারে। এরপরই বকদালভ্য মুনির কাছে পৌঁছন রামচন্দ্র। সমস্যা শোনার পর ঋষি তাঁকে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে সমস্ত সেনা-সহ উপবাস পালনের কথা বলেন। বলেন, 'এই ব্রতর প্রভাবে সমুদ্র পার করতে সফল হবেন তাঁরা এবং লঙ্কা বিজয়ও সম্ভব হবে। পৌরাণিক কাহিনী মতে, একাদশী ব্রত পালন করার পরই রামসেতুর নির্মাণ করে লঙ্কাবিজয় করেন রামচন্দ্র। তারপর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে এই তিথির মাহাত্ম্য। ভক্তদের বিশ্বাস বিজয়া একাদশী (Vijaya Ekadashi) পালন করলে শত্রু বিজয় করা যায়।
+ There are no comments
Add yours