মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জাতীয় গান বন্দেমাতরমকেও (Vande Mataram) এবার বিশেষ মর্যাদা দেবার জন্য দেশের নাগরিকদের নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শনিবার দিল্লি হাইকোর্টে একটি হলফনামা দিয়ে জানাল কেন্দ্র সরকার। অর্থাৎ দুটো সঙ্গীতকেই সমান মর্যাদার পক্ষে কেন্দ্র। উল্লেখ্য, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো বা গাওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধানে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ভারতের জাতীয় গান বন্দেমাতরমের ক্ষেত্রে তেমন কোনও নিয়ম বা তা অমান্য করলে শাস্তিমূলক বিধান নেই।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায় দিল্লি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই দিল্লী হাইকোর্টে হলফনামায় এই নির্দেশিকা দেয় অমিত শাহের দপ্তর। কেন্দ্রের তরফে দিল্লি হাইকোর্টে জানানো হয়েছে, দেশের শীর্ষ আদালতে এই বিষয়ে একটি মামলা উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে বা রায় জানাতে অস্বীকার করে। কারণ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়, আদালতে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গানের বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই। সেই কারণে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কোনও মন্তব্য করতে পারে না। পরবর্তীকালে উচ্চ আদালতের তরফে বন্দে মাতরম গান বাজানোর নির্দেশিকার আবেদন করে একটি পিটিশন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, 'বন্দে মাতরম' ও 'জন গণ মন'-এর মধ্যে কোনও বিরোধ থাকতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ কেন্দ্র মেনে চলে।
প্রসঙ্গত, বন্দেমাতরম হল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসের একটি কবিতা। ১৮৯৬ সালে প্রথমবার গানটি গাওয়া হয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গেও এই গানটি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। তবে যখন জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচনের বিষয় আসে, তখন বন্দে মাতরমের পরিবর্তে জনগণমনকেই বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত হয় জনগণমনর মতো একই মর্যাদা দেওয়া হবে বন্দে মাতরমকেও। সেই মতো ১৯৫০-এর ২৪ জানুয়ারি জনগণমনকে (National Anthem) জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি বন্দেমাতরমকে জাতীয় গান (National Song Of India) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
অপরদিকে,কবিগুরুর রচিত জনগণমন গানটি প্রথম গাওয়া হয়েছিল ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় আয়োজিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশনে। আর তার ঠিক পরের দিন দ্য বেঙ্গলি পত্রিকায় গানটির ইংরেজি অনুবাদসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯১২ সালের জানুয়ারি মাসে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ভারত-বিধাতা নামে প্রকাশিত হয় গানটি। তারও পরে গানটির ইংরেজি অনুবাদ করেন রবীন্দ্রনাথ। পরবর্তীকালে ১৯৩৭ সালে প্রথম সুভাষচন্দ্র বসু (Subhas Chandra Bose) জনগণমন-কে জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব করেন।
এরপর কেটে যায় আরও অনেকগুলো বছর। ১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনও একটি অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিনিধিদের থেকে জাতীয় সংগীতের একটি রেকর্ড চাওয়া হয়। তাঁরা বিষয়টি ভারত সরকারকে জানান এবং জনগণমন-কেই (Jana Gana Mana) বাজানোর পক্ষে মত দেন। এরপর সরকারের অনুমতি অনুসারে জাতিসংঘের অর্কেস্ট্রাবাদনের একটি রেকর্ড সেই অনুষ্ঠানে বাজানো হয়। আরও পরে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও এই গানটিকেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত করার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। যার জেরে ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি জনগণমনকেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত (National Anthem) হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
+ There are no comments
Add yours