মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!
সালটা ছিল ১৯৪৮। ওই বছরেরই ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তানের গণপরিষদে একটি সংশোধনী প্রস্তাব আনেন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয় গঠিত হয় ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তানে সেসময়ে উর্দু ভাষায় যাবতীয় কাজ চালানো হত, তার সঙ্গে অবশ্যই ইংরেজিও ছিল কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান যেখানে ১০০ শতাংশই বাঙালিদের বসবাস ছিল সেখানকার অধিবাসীদেরকেও সংসদে উর্দুর পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য রাখতে হত এবং সরকারি কাজে এই দুটো ভাষাই ব্যবহার করতে হতো, স্বাভাবিকভাবে বাংলা ভাষা চেতনায় অথচ মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম উর্দু । ওই সংশোধনীতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন যে ইংরেজি এবং উর্দুর পাশাপাশি সংসদে বাংলায় বক্তৃতা করতে দিতে হবে এবং সরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহারও শুরু করতে হবে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সেই দাবি নস্যাৎ করে দেয় পাক প্রশাসন এবং জোর করে উর্দুকে চাপিয়ে রাখা হয় বাংলা ভাষার উপরে।
কোন পরিস্থিতিতে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন
জানা যায়, তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং মহম্মদ আলি জিন্নাহ সেসময়কার পূর্ব পাকিস্তান মানে এখনকার বাংলাদেশ সফরে এসে নানা কটূক্তিও করতে থাকেন বাংলাভাষাকে নিয়ে। এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। এই পটভূমিকাই জন্ম দেয় ভাষা আন্দোলনের। ১৯৫২ সালে সেই আন্দোলনে চরম আকার নেয়। ভাষা আন্দোলনকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে দলে দলে ছাত্রদের উন্মুক্ত যোগদান। প্রতিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাংলা ভাষার জন্য রাস্তায় নামতে থাকে। সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের অধিকারের দাবিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পথে নামে। ওই বছরেরই ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
উর্দুর করাল গ্রাস থেকে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার জন্য এই আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুপুর তিনটে নাগাদ গুলি চালায় তৎকালীন পাক-প্রশাসন, পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে মারা যান বেশ কয়েকজন। অবশেষে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। এবং ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে সে দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকেও স্থান দেওয়া হয়।
উর্দু ভাষার আগ্রাসন থেকে বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর জন্য এই আন্দোলন, এই লড়াইকে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। সারা বিশ্বব্যাপী তাই প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (International Mother Language Day)।
+ There are no comments
Add yours