মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এখনও ভোর হলে ঘুম ভাঙে অমিত সরকারের। অবচেতন মনে মাঝে মধ্যে কানে বাজে তাঁত টানার ‘খটা-খট’ শব্দ। যে শব্দের সঙ্গে মিশে রয়েছে বাপ-ঠাকুরদার পারিবারিক তাঁতের ব্যবসার যাবতীয় হিসেবনিকেশ। সে সব এখন অতীত। বাড়ির উঠোনের এক পাশে পড়ে রয়েছে বন্ধ হয়ে থাকা তাঁতের পুরনো কলকব্জা (Bengal Industry)। শাড়ি ছেড়ে মুদির ব্যবসা ধরে তেল, নুনের হিসাবে ব্যস্ত অমিত।
দুর্গাপুজোর আগে দম ফেলার সময় মিলত না
“ভোর থেকে ২৫ জন তাঁতশিল্পী কাজ করতেন। দুর্গাপুজোর আগে দম ফেলার সময় পেতাম না। সে ব্যবসা শেষ হয়ে গেল!”, বলছিলেন ঠ্যাঙাপাড়ার অমিত সরকার। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের ঠ্যাঙাপাড়া, মহারাজপুর, বোরডাঙি আগে ছিল তাঁতশিল্পের আঁতুড়ঘর (Bengal Industry)। ঠ্যাঙাপাড়ার প্রত্যেক বাড়িতে তাঁতের কল ছিল। ভোর বেলা এই এলাকা দিয়ে যাবার সময়ে 'খটা খট' শব্দ শুনে পথিকরা বুঝতেন, এটা ঠ্যাঙাপাড়া। তাঁদের তৈরি ‘আশীর্বাদ’, ‘রাঙা বউ’, ‘জন্মভূমি’, ‘অজন্তা, ‘জনতা”, “মালা’ শাড়ি একটা সময়ে উত্তরবঙ্গ জুড়ে জনপ্রিয় ছিল। নদিয়া জেলার নবদ্বীপ থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই শাড়ি কিনে নিয়ে যেতেন। শুধু পুজোর সময়ই ৮-১০ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। কয়েক হাজার মানুষের রুজিরুটি জড়িয়েছিল এই তাঁতের সঙ্গে। আর কয়েক দিন পরেই পুজো। অথচ, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে কাপড় বোনার তাড়া নেই। কারণ, সে ব্যবসা ছেড়ে এখন কেউ মাছের ব্যবসা করেন, কেউ টোটো চালান, কেউ অন্যের দোকানে দিনমজুরের কাজ করেন। গঙ্গারামপুরের পশ্চিম হালদারপাড়ার বাসিন্দা সুমন দাস নিজের ১০টি তাঁত বন্ধ করে টোটো চালান। গঙ্গারামপুরের বেলবাড়ির বাসিন্দা বাবু সরকার তাঁত ছেড়ে মুদির দোকানের হকারি করছেন। ২৬টি তাঁতের মালিক কালীতলার বাসিন্দা মঙ্গল দাস মাছের ব্যবসা ধরেছেন।
তাঁত ছেড়ে অন্য পেশায় (Bengal Industry)
২০১০ সালের সরকারি হিসেব বলছে, এখানে ৩৬ হাজার তাঁত ছিল। ২০১৮ সালের সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২,৮০০টিতে। বর্তমানে এখানে সাকুল্যে হাজার চারেক তাঁত রয়েছে বলে তাঁতশিল্পীদের দাবি। ‘গঙ্গারামপুর তাঁত মালিক ও তাঁত শ্রমিক যৌথ কমিটি'র সভাপতি উৎপল গোস্বামী বলেছেন, “এখনও তাঁতশিল্পী অনেক আছেন। কিন্তু আধুনিক বাজার ধরার মতো শাড়ি তৈরির কোনও প্রশিক্ষণ না থাকায়, তাঁত (Bengal Industry) ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন শিল্পীরা।”
ধুঁকছে এই কুটির শিল্প (Bengal Industry)
দক্ষিণ দিনাজপুর ছাড়া মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারে কিছু তাঁত কল ছিল। ওই জেলাগুলিতেও তাঁতশিল্প উঠে যাওয়ার মুখে। পুরাতন মালদহের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতিপাড়ায় এখন মাত্র ২০ থেকে ২৫টি পরিবার তাঁত বুনছেন। গামছা, সাধারণ শাড়িই শুধুই বোনা হচ্ছে (Bengal Industry)। উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির দোমহনাতে এক সময়ে অনেক তাঁত কারখানা ছিল। এখন তাঁতিরা পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঢুকেছেন। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থেকে মাথাভাঙার নিশিগঞ্জের-বিস্তীর্ণ এলাকায় তাঁতকল ছিল। সেখানেও ধুঁকছে এই কুটির শিল্প। ‘তুফানগঞ্জ হ্যান্ডলুম ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র সম্পাদক বিবেক দাস বলেন, “পনেরো হাজারের মতো তাঁত শিল্পী ছিল এই মহকুমায়। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা এক হাজারের মতো।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours