মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কোভিড-১৯ একটি জটিল রোগ। কখনও এই রোগের সংক্রমণে তেমন কোনও উপসর্গই থাকে না। আবার কখনও এটি মানুষকে টেনে নিয়ে যায় মৃত্যুর দোরগোড়ায়। একের পর এক রূপ পরিবর্তন করে গত তিন বছর ধরে ঝড়ো ব্যাটিং করে চলেছে কোভিড-১৯। সেরে গেলেও কোভিড পরবর্তী সময়ে মানবশরীরে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর একটি অন্যতম জটিলতা হলো এটি শরীরের রক্তনালিতে বহমান রক্ত জমাট বাঁধাতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় ক্লটিং(clotting) বা এম্বোলিজম(embolism)। আর তখনই শরীরে জটিলতার সূত্রপাত।
ফুসফুসের পালমোনারি ধমনিতে ক্লট বা রক্ত জমাট বাঁধলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভয়ানক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আবার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ক্লট হলে হার্ট অ্যাটাক (heart attack)হতে পারে। মস্তিষ্কের রক্তনালি আটকে হতে পারে স্ট্রোক। এ ছাড়া অন্ত্রনালি, কিডনি, হাত-পা এসব অঙ্গেরও রক্তনালি আটকে সমস্যা তৈরি হয়।
কেন করোনাভাইরাস এভাবে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে রক্তনালি আটকে দেয়—এ নিয়ে গবেষণা চলছে। সম্প্রতি, সুইডেনের (sweden)উমেয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের (University)গবেষকরা জানিয়েছেন করোনা থেকে সেরে ওঠার ছয় মাস পরেও এর প্রভাবে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস বা পায়ের পেশিতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে করোনা নেগেটিভ হওয়ার তিনমাস পরেও। আর ফুসফুসে রক্ত জমাট (pulmonary embolism)হতে পারে ছয় মাস পর্যন্ত।
দেখা গিয়েছে ভাইরাসের প্রভাবে ছোট ছোট রক্তনালি বা কৌশিক জালিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা যখন উদ্দীপ্ত হয় তখন এমন কিছু উপাদান তৈরি হয় যা রক্ত জমাট বাঁধতে ইন্ধন জোগায়। ভাইরাস শরীর ত্যাগ করলেও এর প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী।
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি সবার সমান নয়। কারও কারও ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষত যাঁরা বয়স্ক, ওজন বেশি, ডায়াবেটিস, কিডনি বা হৃদ্রোগে আক্রান্ত তাঁদের রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেশি হয়।
তাই করোনা পরবর্তী সময়ে রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে কী করণীয়, তা জেনে রাখা ভাল:
১) নিজেকে সচল রাখা। দীর্ঘ সময় শুয়ে-বসে থাকলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। সে জন্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও নিজেকে হালকা কাজের মধ্য রাখা জরুরি। হালকা ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপি করে পায়ের রক্ত জমাট বাঁধা আটকানো যায়।
২ ) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। শরীরের ওজন বেড়ে গেলে সমস্যাও বেড়ে যায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন।
৩) চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রক্ত জমাট বাঁধায় সহায়ক কোনও ওষুধ এসময় না খাওয়া ভাল। বিশেষত জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ইত্যাদি।
৪) পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। ফলের রস, ডাবের জল, দইয়ের ঘোল খেতে পারেন। ৫) চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রক্ত পরীক্ষা করান। রক্ত পরীক্ষা (blood test)করে ঝুঁকি নির্ণয় করা যায়। রক্তে ডি-ডাইমার নামক একটি উপাদান বেড়ে গেলে বুঝতে হবে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া উদ্দীপ্ত হচ্ছে। এমনটি হলে চিকিৎসকের কথামতো রক্ত পাতলা করার (blood thiner) ওষুধ শুরু করতে হবে।
Embolism after covid: করোনা সেরে যাওয়ার ছয় মাস পরেও রক্ত জমাট বাঁধত পারে , গবেষণায় মিলল প্রমাণ
শুধু গুরুতর অসুস্থ নয়, মৃদু কোভিডের শিকার এমন ব্যক্তিদেরও রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা রয়েছে। ভাইরাস শরীর ত্যাগের তিন থেক ছয় মাস পরেও এই সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে।
Share:
Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
+ There are no comments
Add yours