মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি করকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) স্বতঃপ্রণোদিত মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে সিলবন্ধ খামে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে আরজি কর মামলার শুনানি চলছে। শুনানিতে ডাক্তারদের কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর কারা ভয় দেখাচ্ছেন তাঁদের? চিকিৎসকদের কাছে নামও জানতে চাওয়া হয়।
থানায় অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন (Supreme Court)
বিচারপতি (Supreme Court) পারদিওয়ালা আইনজীবী সিব্বলের কাছে জানতে চান, যে রেকর্ড হাতে এসেছে, তাতে ৯ অগাস্ট টালা থানায় ইউডি কেস ৮৬১ দায়ের হয়। সেটি দায়ের হয় রাত সাড়ে এগারোটায়। এফআইআর দায়ের হয় রাত ১১.৪৫ মিনিটে। এটা কি সঠিক? আইনজীবী সিব্বল বলেন, আমাদের কাছে গোটা টাইমলাইন রয়েছে। ইউডি কেস দায়ের হয় দুপুর ১.৪৫ মিনিটে। সলিসেটর জেনারেল তখন বলেন, না, এই তথ্য একেবারেই ঠিক নয়। বিচারপতি তখন পুলিশের কোনও আধিকারিক আদালতে উপস্থিত রয়েছেন কিনা তা জানতে চান, তাঁর কাছ থেকে ব্যাখ্যা চান।
ময়নাতদন্তের আগেই কী করে বলে দেওয়া হল অস্বাভাবিক মৃত্যু?
বিচারপতি পারদিওয়ালা জানতে চান, কখন ময়নাতদন্ত হল? রাজ্য জানায়, সন্ধ্যা ৬টা ১০ থেকে ৭টা ১০-এর মধ্যে। বিচারপতি পারদিওয়ালা রাজ্যের কাছে জানতে চান, অস্বাভাবিক মৃত্যু কখন দায়ের করা হয়? রাজ্য জানায়, দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছিল। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “এটা কি অস্বাভাবিক মৃত্যু? যদি হয়, তবে ময়নাতদন্তের কী প্রয়োজন ছিল? এখানে দেখতে পাচ্ছি রাত সাড়ে ১১টায় জেনারেল ডায়েরি হয়। তার ১৫ মিনিটের মাথায় এফআইআর হল? আদালতের কাছে সঠিক ভাবে বক্তব্য রাখুন। বিচারপতি পারদিওয়ালা আরও বলেন, "অবাক হচ্ছি, ময়নাতদন্তের আগেই বলে দেওয়া হল অস্বাভাবিক মৃত্যু?"
আরও পড়ুন: ব্র্যান্ড ভ্যালু হারানোর ভয়! মিছিলে নেই, মেয়ের সঙ্গে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সৌরভের
চিকিৎসকদের কাজে ফেরার নির্দেশ
এদিন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। প্রসঙ্গত, আরজি করের চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার পর থেকে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এখনও সেই আন্দোলন চলছে। অন্যদিকে, গত সোমবারের শুনানিতে আরজি কর হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়েও বৃহস্পতিবার রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
ডাক্তারদের ভয় দেখাচ্ছে কে?
সিনিয়র আইনজীবী গীতা লুথরা সওয়াল করেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত। তাঁদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তদন্তকারীদের কাছে সিল বন্ধ খামে কয়েকজনের নাম দিয়েছেন বলে তাঁরা দাবি করেছেন। আর তারপর থেকেই তাঁদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি (Supreme Court) প্রশ্ন করেন, "কারা ভয় দেখাচ্ছেন? কাদের দ্বারা ভীত?" আইনজীবী জানান, যাঁরা ঘটনার প্রতিবাদে মুখ খুলেছিলেন, তাঁদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে, তাঁদের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিডিওর টাইমলাইন রয়েছে। প্রধান বিচারপতি আবারও প্রশ্ন করেন, কারা ভয় দেখাচ্ছেন? আইনজীবী জানান, কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। আমি কলকাতার চিকিৎসকদের কাছে গিয়েছিলাম। দুষ্কৃতীদের তরফেও চাপ আসছে। হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের একাংশের তরফেও চাপ আসছে। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি দেখে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি
এক আইনজীবী এদিন সওয়াল করেন, জুনিয়র চিকিৎসকরা হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন। সেটা ৩৬ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টাও ছাড়িয়ে যায়। কীভাবে এক জন চিকিৎসক ৩৬ ঘণ্টা টানা ডিউটি করতে পারেন? যিনি করছেন তাঁর শারীরিক ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকে না। যৌন নিগ্রহ তো অনেক দূরের কথা, সামান্য নিগ্রহই প্রতিরোধ ক্ষমতা আর তাঁর শরীরে থাকে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এই বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এটা লক্ষ্য করা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা বিভিন্ন রকমের হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। সেটা কেবল যৌন হয়রানিই নয়। আর এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। আমরা অনেক ইমেল পেয়েছি। জুনিয়র চিকিৎসকদের ৪৮ ঘণ্টা, ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours