মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যেরকম এবং যে পরিমাণের ইনজুরি বা আঘাতের উল্লেখ রয়েছে, তাতে তা একজনের কাজ নয়, কমপক্ষে ২ বা তিনজন রয়েছে, আরজি কর-কাণ্ডে (RG Kar Incident) এমনই দাবি চিকিৎসকদের। আরজি কর-কাণ্ডের (RG Kar Rape and Murder) প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের একাংশের তরফে দাবি করা হয়েছে, ধৃত সঞ্জয় রায় একাই পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছে ৷ তবে, চিকিৎসক মহলের একাংশ সেই দাবি নস্যাৎ করেছে ৷ পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এবং নিহত চিকিৎসকের পড়ুয়ার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সহমত নন চিকিৎসকদের একাংশ৷
পুলিশের দাবিকে মান্যতা নয়
গত শুক্রবার আরজি কর (RG Kar Incident) মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে উদ্ধার হয় মহিলা চিকিৎসকের দেহ। আর সেই মৃত্যুই কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। দেহ উদ্ধার হওয়ার দিন রাতেই একজনকে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত একাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাক্তার শংকর নাথ ঝা সংবাদমাধ্যমেকে বলেন, "আমি পুলিশের এই অনুমানকে একেবারে নস্যাৎ করছি৷ তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি৷ ওই চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ যে অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল এবং তাঁর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে আমি বলতে পারি, যে এই ঘটনা একার পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়৷ এই ঘটনায় কমপক্ষে দু-তিনজন যুক্ত রয়েছে ৷ কারণ, মেয়েটির চোখ, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে ৷ তাঁর গলার হাড় ভেঙে রয়েছে৷ গোপনাঙ্গে গভীর ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে ৷ তা একার পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয় ৷"
ধর্ষণ করেই খুন
পুলিশের একটি অংশের তরফে বলা হচ্ছে, ওই পড়ুয়াকে আগে খুন এবং তারপর তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে ৷ এই বিষয়টিকেও সরাসরি নস্যাৎ করেন চিকিৎসক শংকর নাথ ঝা৷ তিনি বলেন, "পুলিশের এই ধারণা পুরোপুরি ভ্রান্ত ৷ যখন মৃতদেহের ধর্ষণ করা হয়, সেই ক্ষেত্রে ওই মেয়েটির শরীরে যে ক্ষতের চিহ্ন আছে, তা আসবে না৷ এছাড়াও তাঁর শরীরে বিশেষ বিশেষ কয়েকটি জায়গার হাড় ভাঙা অবস্থায় রয়েছে৷ মৃত একজনের সঙ্গে ধর্ষণ করলে যতটা রক্তক্ষরণ হয় এবং জীবিত একজনের সঙ্গে বলপূর্বক ধর্ষণ করলে, যে পরিমাণ রক্ত বার হয়, তা সমান নয়৷ মৃত্যুর আগের ইনজুরি এবং মৃত্যুর পরের ইনজুরি পুরোপুরি আলাদা৷ এটা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা দেখছেন ৷ এটি অবশ্যই ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা৷"
একাধিক ব্যক্তি যুক্ত, দাবি বাবার
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃতার দেহ থেকে ১৫০ গ্রাম রক্ত মিশ্রিত সেমেনিক ফ্লুইড স্যাম্পেল পাওয়া গিয়েছে। ফলে, স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, একাধিক ব্যক্তি ওই মহিলা চিকিৎসককে যৌন নিগ্রহ করেছে, এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, যাঁরাই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখছেন, সবাই একই কথা বলছেন। ডাক্তার ফোরাম থেকে শুরু করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, সবাই বলছেন, ‘এটা একজনের কাজ নয়, একার পক্ষে এরকম ঘটনা সম্ভব নয়।’ পুলিশের ওপর আস্থা রাখলেও তিলোত্তমার বাবা বলেন, "আরজি কর হাসপাতালে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে যারা আছে, তাদের সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রেখেছি।"
অপরকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ
চিকিৎসকদের একাংশের কথায়, "যারা এই প্রকারের ঘটনা ঘটায়, তাদের আমরা ডাক্তারি ভাষায় বলি সাইকোপ্যাথ ৷ এরা সাধারণ মানুষ নয় ৷ এরা অপরকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায় ৷ আমাদের সব থেকে বড় ভয় হল, এরা যে ধরনের মানুষ, আগেও একাধিকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং পরবর্তীকালেও এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে৷ এরা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে ৷ এরা সাধারণ মানুষের মতো নয় ৷ এরা সাধারণ সমাজে বাস করার যোগ্য নয়৷ এদেরকে চিহ্নিত করে, অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি৷ সে বা তারা যত বড়ই প্রভাবশালী হোক বা চিকিৎসক ফেটারনিটির কেউ হন, সে ক্ষেত্রেও তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত।"
আরও পড়ুন: আরজি কর-কাণ্ডে আজ পথে বুদ্ধিজীবীরা, বিচারের দাবিতে নাগরিক মিছিল রুখল পুলিশ
কেন আড়ালের চেষ্টা
আরজি কর (RG Kar Incident) কর্তৃপক্ষের থেকে কিছু আশা করা যায় না। তারা প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছে এমনই দাবি, আরজি করে পড়ুয়াদের একাংশের। এক ছাত্রের কথায়, "যেখানে অভিযুক্ত লুকিয়ে রয়েছে, সেখানে আমাদের থেকে কিছু আশা করো না। বাইরের সকলকে অনুরোধ, আপনারা নিজেদের মতো আন্দোলন করে যান। যেখানে জেনারেল বডির বৈঠকে কিছু সুরাহা করা হচ্ছে না। যেখানে জেনারেল বডির বৈঠক নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। আবার প্রিন্সিপাল এসে বলছেন, কেন রাতে ওখানে ঘুমাবে? সেমিনার রুম কি ঘুমানোর জায়গা। যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ লোপাট হয়ে যাচ্ছে। যেখানে পুলিশ এসে প্রথমে বলছে আত্মহত্যা। যেখানে কাউন্সেলিং কমিটিতে সাইকিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্টের প্রধানকে রাখা হয়েছে, এটা প্রমাণ করতে যে মৃত চিকিৎসক (RG Kar Rape and Murder) মনোরোগী ছিল। সেখানে সত্য আড়াল করার ঘটনা স্পষ্ট।" আর এক পড়ুয়ার কথায়, "এটা একটা চক্রান্ত। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এক ইন্টার্ন। সেই ইন্টার্নের যথেষ্ট রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও যথেষ্ট উচ্চপদস্থ। তাঁকে নিরাপত্তা দিতেই এতগুলো গেম খেলা হচ্ছে।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours