মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাম মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনই বেঙ্গালুরুতে বিজেপির সদর দফতরে আইইডি বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণের অভিযুক্তরা। তদন্তে নেমে চার্জশিটে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ (NIA)। এই তথ্য ব্যাপক শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
এনআইএ-এর বক্তব্য(NIA)
৯ সেপ্টেম্বর, এক বিবৃতি দিয়ে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি অর্থাৎ এনআইএ (NIA) জানিয়েছে, রামেশ্বরমে বিস্ফোরণের পিছনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও বেঙ্গালুরুর মল্লেশ্বরামে বিজেপির সদর দফতরকে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷ একই ভাবে এনআইএ আরও দাবি করে, অভিযুক্তরা গত ২২ জানুয়ারি, অযোধ্যায় প্রভু রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের দিনেই ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যার পরে, গত মার্চের ১ তারিখ অভিযুক্তরা রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। সেখানে মোট ৯ জন আহত হয়েছিলেন।
কোন কোন ধারায় মামলা?
রামেশ্বরম বিস্ফোরণ মামলায় দায়ের করা চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত হিসেব যে সব দুষ্কৃতীদের নাম রয়েছে, তারা হল—মুসাভির হুসেন শাজিব, আবদুল মতিন আহমেদ ত্বহা, মাজ মুনির আহমেদ এবং মুজাম্মিল শরিফ। এই চারজনকে তদন্তকারী সংস্থা গ্রেফতার করছে। তাদের বিরুদ্ধে এনআইএ (NIA) আইপিসি (IPC), ইউএপিএ (UAPA) আইন, বিস্ফোরক পদার্থ আইন এবং পিডিএলপি (PDLP) আইনের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে সংযোগ
এনআইএ (NIA) ২০১২ সাল থেকে লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) বেঙ্গালুরু ষড়যন্ত্র মামলায় মহম্মদ শাহিদ ফয়জালকে পলাতক জঙ্গি হিসাবে নাম প্রকাশ করেছিল৷ নাশকতামূলক কাজের জন্য শাজিব ও ত্বহাকে অর্থ সহায়তা করত ওই জঙ্গি। বিস্ফোরণ মামলায় ফয়জালকে নাশকতামূলক কার্যকলাপে টাকা সরবরাহ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। ত্বহাকে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের পিছনে মাস্টারমাইন্ড বলে দাখিল করা চার্জশিটে উল্লেখ করেছে এনআইএ। তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, ৩ মার্চ মামলাটি হাতে নেওয়ার পরে বেশ কয়েকটি রাজ্য পুলিশ ইউনিট এবং অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা, বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তদন্ত প্রক্রিয়া চালানো হয়। জানা গিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে আল-হিন্দ মডিউলটি ভাঙার পর থেকে শাজিব এবং ত্বহা পলাতক হয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
আল-হিন্দের ১৭ জন সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট
আল-হিন্দ হল ২০-সদস্যের আইসিস মডিউল। বেঙ্গালুরুতে যার নেতৃত্বে ছিল মেহবুব পাশা, কুড্ডালোর নেতৃত্বে ছিল খোয়াজা মইদিন। আবার বেঙ্গালুরুর গুরুপানপাল্যাতে পাশার আল-হিন্দ ট্রাস্ট অফিস থেকে নাশকতামূলক কাজের পরিকল্পনা করা হত। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, এবং কেরলেও এই গ্রুপ বেশ সক্রিয় রয়েছে। মূলত জঙ্গলে আত্মগোপন করে ষড়যন্ত্রের কাজ চালানো হত। এমনকী, গভীর জঙ্গলে কীভাবে বেঁচে থাকা যায় তা শিখতে বিখ্যাত চন্দন দস্যু বীরাপ্পনের বইও কিনেছিল জঙ্গিরা। আল-হিন্দের ১৭ জন সদস্যের বিরুদ্ধে এনআইএ (NIA) চার্জশিট দিয়েছে। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল হিন্দু ধর্মীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ অফিসার, সরকারী আধিকারিক এবং নির্দিষ্ট উচ্চ-প্রোফাইল যুক্ত ব্যক্তি।
আরও পড়ুনঃ মাওবাদী দমনে সক্রিয় সরকার, ৪ হাজার সিআরপিএফ পৌঁছল ছত্তিশগড়ে
ত্বহা ছিল হামলার মূলচক্রী
এনআইএ (NIA) জানিয়েছে, অভিযুক্তরা জালিয়াতি করে ভারতীয় সিম কার্ড এবং ভারতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি নিয়েছিল। সেই সঙ্গে ডার্ক ওয়েব থেকে ডাউনলোড করা বিভিন্ন ভারতীয় ও বাংলাদেশি পরিচয় নথিও ব্যবহার করেছিল। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে যে, পলাতক জঙ্গি মহম্মদ শাহিদ ফয়জালের সঙ্গে লস্কর জঙ্গি শোয়েব আহমেদ মির্জার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ত্বহা। মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনআইএ-র মতে, ত্বহা ছিল হামলার মূলচক্রী। মুসাভির হোসেন শাজিব ছিল বিস্ফোরণ হামলাকারী। মুজাম্মিল শরিফ, হামলার সরঞ্জাম হিসেবে সিম কার্ড-স্মার্টফোনের সরবরাহ করেছিল। বিস্ফোরণ বাস্তবায়নে মাজ মুনির আহমেদ এবং শোয়েব আহমেদ মির্জা সক্রিয় ভাবে কাজ করেছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours