মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত ছেড়ে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেওয়া ব্যক্তিদের সম্পত্তি দখল করতে মাঠে নামল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। গোটা দেশ থেকে সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সম্ভব হচ্ছিল না। এবার কলকাতায় (Kolkata) শুরু হল এনিমি প্রপার্টি (Enemy Property Survey) বা শত্রু সম্পত্তির সমীক্ষা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্ট এই সমীক্ষার শুরু করল। এই প্রথমবার এমন সমীক্ষা হচ্ছে। বুধবার ভরদুপুরে রাজাবাজারে এরকমই একটি সম্পত্তিতে হানা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে সমীক্ষা (Kolkata)
জানা গিয়েছে, কলকাতার (Kolkata) রাজাবাজারের ১৭০ নম্বর কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে এই সমীক্ষা চলছে। প্রায় ৪৪ কাঠা জমির উপরে দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করছেন ৭০০০ বাসিন্দা। রয়েছে ২৫টি দোকান। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এখানকার অনেক নাগরিকই এই সম্পত্তি ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। তাঁরা কেউ এই সম্পত্তি দাবি না করায়, তা এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের অধীনস্থ হয়ে যায়। বুধবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই ব্যাটেলিয়ন জওয়ান এনে এই সমীক্ষা শুরু করেছে এনিমি প্রপার্টি ডিপার্টমেন্ট। জানা গিয়েছে, রাজাবারের বহুতলটিতে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি তলে অনেকে বসবাসও করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা বলেন, "এই সম্পত্তিটি এনিমি প্রপার্টি। তাই দেশের আইন অনুসারে এটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সম্পত্তি। ফলে এবার থেকে এখানে থাকতে গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে ভাড়া দিতে হবে। সম্পত্তিটি নিয়ে একটি মামলা ছিল। যা সম্প্রতি মিটেছে। তাই আমরা সম্পত্তির দখল নিতে এসেছি। এই সম্পত্তিতে অনেক জবরদখলকারী রয়েছেন। তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে কথা বলছি। আপাতত আমরা এই ভবনের বাসিন্দাদের নাম নথিভুক্ত করতে এসেছি।"
আরও পড়ুন: সব দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে আন্দোলন, গভীর রাতে ঘোষণা জুনিয়র ডাক্তারদের
এনিমি প্রপার্টি কী?
দেশ ভাগের পর যারা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের মালিকানাধীন ভারতীয় সম্পত্তি বণ্টনের বৈধকরণ ও নিয়ন্ত্রণের আইন হল শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৮। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই আইন পাশ করা হয়েছিল। এই আইন অনুযায়ী, ভারত সরকার এই সম্পত্তির মালিক হবে। শত্রু আইনে যদি সম্পত্তির মালিকানা 'শত্রু'র কাছে থেকে যায়, তবে সম্পত্তির অধিকার ও মালিকানা (Kolkata) কাস্টডিয়ান বা হেফাজতকারীর হাতে থাকে। আসল মালিকের অনুপস্থিতিতে কাস্টডিয়ান বা বসবাসকারী এই জমি বা সম্পত্তি ভাগাভাগি বা বিক্রি করতে পারে। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ৪ হাজার ৩০১টি এই ধরনের সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রপার্টি ডিপার্টমেন্টের অধীনস্থ। দেশজুড়ে প্রায় ১২ হাজার এই ধরনের সম্পত্তি রয়েছে। সবথেকে বেশি এই ধরনের সম্পত্তি রয়েছে উত্তর প্রদেশে। ৫৩৬১টি এনিমি প্রপার্টি বা শত্রু সম্পত্তি রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দিতে হবে মাসিক ভাড়া
জানা গিয়েছে, কলকাতায় (Kolkata) ৯৬টি এনিমি প্রপার্টি রয়েছে। সারা রাজ্যে প্রায় ৪৫০০ এই ধরণের সম্পত্তি রয়েছে। সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এনে তার থেকে আয়ের রাস্তা খুঁজছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। জানা গিয়েছে, এর আগেও একদিন বাড়িটিতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা। সেদিন তাঁদের বাধা দেন স্থানীয়দের একাংশ। তাই বুধবার আধাসেনা ও কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের নিয়ে বাড়িটিতে হানা দেন তাঁরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, এবার থেকে এই বাড়িতে থাকতে গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বেঁধে দেওয়া মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। তবে কেউ চাইলে সম্পত্তি কিনতেও পারেন। সম্পত্তির বাজারমূল্য ১ কোটি টাকার কম হলে উপযুক্ত নথি দেখিয়ে সম্পত্তি কেনার জন্য আবেদন করতে পারেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours