তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার থাকুক ডায়েটে! তামাকজাত (Tobacco) যে কোনও পদার্থকেই বাদ দিতে হবে ফি-দিনের তালিকা থেকে! ৩১ মে ওয়ার্ল্ড নো টোবাকো ডে-তে একথাই প্রচার করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তামাক বা তামাকজাত যে কোনও ধরনের পণ্য যেমন বিড়ি, সিগারেট, পানমশলা বা গুটখার মতো পণ্য বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। তাই সুস্থ জীবনের জন্য তামাককে সম্পূর্ণ বর্জন করার পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসক মহল।
কী ঝুঁকি বাড়ছে তামাকের (Tobacco) জন্য?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, তামাক ক্যানসারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ফুসফুস, গলা, মুখ, পেটে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় তামাক। নিয়মিত তামাক সেবন করলে মুখ ও গলা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া তামাক সেবন হার্টের জন্যও ক্ষতিকারক। নিয়মিত তামাক (Tobacco) সেবন করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাছাড়া ফুসফুসের নানা সংক্রমক রোগ ও বক্ষঃরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তামাক সেবনের অভ্যাস থাকলে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। তামাক সেবনের অভ্যাস দেহের একাধিক অঙ্গের উপর কুপ্রভাব ফেলে। তাই তামাক সুস্থ জীবনযাপনের পরিপন্থী। ওয়ার্ল্ড নো টোবাকো ডে-তে এমনটাই জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল।
এ রাজ্যে তামাক (Tobacco) সেবনের হার কেমন?
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশজুড়ে তামাক (Tobacco) বর্জন নিয়ে সচেতনতা জরুরি। তবে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। কারণ, ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা দেশের তুলনায় এ রাজ্যে তামাকজাত দ্রব্য, বিশেষত সিগারেটে অভ্যস্তের সংখ্যা অনেক বেশি। যা বেশ উদ্বেগের কারণ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট তামাকজাত দ্রব্যে অভ্যস্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩.৫ শতাংশ। এর মধ্যে সিগারেটে অভ্যস্ত ৫.২ শতাংশ। নিয়মিত বিড়িতে অভ্যস্ত ১৪.৪ শতাংশ। আর ধোঁয়াবিহীন তামাক অর্থাৎ, পানমশলা, গুটখা জাতীয় তামাক সেবনে অভ্যস্ত ২০.১ শতাংশ। অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, চণ্ডীগড়ের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কারণ, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় তামাক নিয়ে অসচেতনতা এ রাজ্যের পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।
কী পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসক মহল?
তামাক বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। তাই প্রথম থেকেই সে দিকে বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে ক্যানসার-শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, "ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। তামাক ক্যানসারের অন্যতম কারণ। তামাক (Tobacco) বর্জন করতে না পারলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়বে। তাই প্রথম থেকেই এ নিয়ে সতর্ক হতে হবে। কিশোর কাল থেকেই যদি সচেতনতা থাকে, তাহলে এ অভ্যাস তৈরি হবে না। তাই স্কুলপর্ব থেকেই পড়ুয়াদের এ নিয়ে সচেতন করা জরুরি। স্কুলপর্ব থেকে প্রয়োজন কর্মশালা। যাতে তারা এ বিষয়ে সজাগ থাকে। কম বয়সীদের মধ্যে বন্ধুদের অভ্যাস, জীবনযাপন সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই তাদের সতর্ক করতে পারলে কাজ অনেকটাই সহজ হবে।" আরেক ক্যানসার চিকিৎসক তাপস দাস বলেন, "সরকারি-বেসরকারি সব মহলেই সচেতনতা জরুরি। তামাক বর্জন একদিনের জন্য নয়। সারা বছর এ নিয়ে সব মহলে সক্রিয়তা দরকার। বিশেষত পার্ক, রাস্তা, মেলা, বাস স্টপ এসব জায়গায় তামাক সেবন করলে যাতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। "
বিশেষজ্ঞ মহল জানাচ্ছে, একদিকে আইনি পদক্ষেপ, আরেক দিকে সচেতনতা বদলে দিতে পারে রাজ্যের ছবি। স্কুলপর্ব থেকে সচেতনতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তামাক সচেতনতা গড়ে তুলবে। আবার প্রাপ্তবয়স্ক কেউ তামাকে অভ্যস্ত থাকলে, তাঁরাও সজাগ হবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে এই নেশা থেকে মুক্তি সম্ভব। পাশপাশি কড়া আইন থাকলে রাস্তাঘাটে, পার্কে বা প্রকাশ্য কোনও জায়গায় তামাক সেবন করা যাবে না। যা সার্বিকভাবে রাজ্যের ধূমপানের ছবি বদলে দেবে। তবে, এসবের জন্য প্রয়োজন সরকারের সক্রিয়তা ও সদিচ্ছা। যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours