মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Modi) দূতের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা (Mamata) বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (Presidential Elections) দেশের প্রথম জনজাতি মহিলা প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে (Droupadi Murmu) ভোট দিতে অক্ষম তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল দার্জিলিং (Darjeeling) রাজভবনে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে (Hemant Biswasarma) জানিয়ে দিয়েছেন তিনি বিজেপির (BJP) প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকেই (Yashwant Sinha) ভোট দেবে তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চান সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জিতুন সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের এই মহিলা মুখ। এনডিএ নেতারা সেই কারণেই সব দলকেই ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতেই মোদির দূত হিসেবে রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বুধবার দার্জিলিঙের রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Governor Jagdeep Dhankhar) উপস্থিতিতে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই, হেমন্ত মমতাকে জানান, প্রধানমন্ত্রী চান দেশের সামনে যখন একজন আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি করার সুযোগ এসেছে তখন সমস্ত রাজনৈতিক ভেদাভেদ সরিয়ে রেখে তৃণমূলেরও উচিত তাঁকে সমর্থন করা। কারণ দ্রৌপদী মুর্মু তৃণমূল ভোট না দিলেও রাষ্ট্রপতি হবেন। সে কথা বুঝেই রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন, ওড়িশার নবীন পট্টনায়েক, মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরেও দ্রৌপদীদেবীকে ভোট দিতে চলেছেন। মমতা বৈঠকে জানান, দ্রৌপদীদেবীর নাম জানিয়ে আগে প্রস্তাব দিলে ভাবা যেত। এখন আর সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ে হঠাৎ বৈঠকে মমতা-হিমন্ত! বিষয় কি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন?
আসলে মমতার কাছে দূত পাঠিয়ে দ্রৌপদীদেবীর জন্য ভোট চাওয়ার পিছনেও রাজনীতিও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। আদিবাসী মহিলা প্রার্থীকে ভোট দিলে বিজেপি জাতীয় স্তরে প্রমাণ করতে পারত বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। এখন ভোট না দিলে বিজেপি বলতে পারে, রাজনৈতিক আকচাআকচির মধ্যেও এক জন আদিবাসী মহিলাকে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসাতে সমস্ত ইগো বিসর্জন দিয়ে বিজেপি মমতার কাছে ভোট চাইতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু মমতা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং আদিবাসী প্রার্থীকে ভোট দেননি।
এর আগে, মমতাকে ফোন করে সমর্থন চান দ্রৌপদীদেবী স্বয়ং। রাজ্য বিজেপির সভাপতি (BJP State President) সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু (Suvendu) অধিকারী যুগ্মভাবে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন। তারপরেই মমতা জানান, আগে এনডিএ প্রার্থীর কথা জানলে তিনি বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন দিতেন না। ঘটনাচক্রে যশবন্ত সিংহ তৃণমূলেরই সহ-সভাপতি ছিলেন। অনেকের মতে, দ্রৌপদী মুর্মুর প্রার্থী হওয়ায় সারা দেশে জনজাতি সমাজে বিজেপির পক্ষে হাওয়া উঠেছে। মমতা তা বিলক্ষণ বোঝেন। তাই দ্রৌপদীদেবীর প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থনের কথা বলে আসলে সেই আদিবাসী সমাজকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: "দ্রৌপদীদেবীর জয় নিশ্চিত, তা সত্ত্বেও...", মমতাকে চিঠি বঙ্গ বিজেপির
এদিকে, দার্জিলিং রাজভবনে মমতা-হেমন্ত এবং রাজ্যপালের একটি ছবি ইতিমধ্যেই তৃণমূলের বিভিন্ন হ্যান্ডেল থেকে প্রচার করা হচ্ছে। বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সেটিং হচ্ছে এমন ধারণা তৃণমূলই সর্বত্র ছড়াতে চাইছে। অনেকেই মনে করছেন, নানা দুর্নীতির মামলায় যেভাবে সিবিআই, ইডি একের পর এক টিএমসি নেতাদের তলব করছে তাতে নিচুতলার কর্মীরা আর সক্রিয়ভাবে দল করতে চাইছেন না। তাঁদেরই টিএমসি বার্তা দিয়ে জানাতে চাইছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরে ভাল সম্পর্ক রয়েছে মমতার। ফলে ইডি-সিবিআইকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এপ্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) বলেন, আদিবাসী মহিলার জন্য আমরা মুসলিম লিগের কাছেও ভোট চেয়েছি। এনডিএ প্রার্থী যাতে সর্বোচ্চ ভোট পান, তার জন্য সব কৌশলই নেওয়া হবে। কিন্তু তৃণমূল প্রমাণ করে দিচ্ছে তারা আদিবাসী সমাজের উত্থান চায় না। আর কেন্দ্রীয় এজেন্সি যারা চুরি-জোচ্চুরি করেছে তাদের ডাকবে এবং জেলে ঢোকাবে। এ নিয়ে কারও ধোঁয়াশা রাখা উচিত নয়।
+ There are no comments
Add yours