মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সরকারি হাসপাতালে রোগী যাবেন। চিকিৎসক প্রয়োজন বুঝে ভর্তি করাবেন। চলবে চিকিৎসা। এই সহজ স্বাভাবিক নিয়ম আর চলে না। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে দরকার শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের সুপারিশ। ক্ষমতার লম্বা হাত না থাকলে পাওয়া যাবে না সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা (West Bengal Health)। সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতালে রোগী ভর্তিকে কেন্দ্র করে মদন মিত্র-বিতর্ক অন্তত সেটাই স্পষ্ট করে দিল।
কী কারণে বিতর্ক?
সম্প্রতি পথ দুর্ঘটনায় জখম এক যুবককে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। কিন্তু সেই রোগীকে ভর্তি করানো যায়নি। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মদন মিত্র। শনিবার থেকে তিনি বারবার বলতে থাকেন, 'সে নো টু পিজি'! মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করলে পিজি-র পরিষেবা কেউ নেবেন না। এমনকী তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চক্ষুশূল, একথাও বলেন। পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, হাসপাতাল চত্বরে কোনও গণ্ডগোল বরদাস্ত করা হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মদন মিত্রের বিরুদ্ধে ভবানীপুর থানায় অভিযোগও দায়ের করে। রবিবার রাতে অবশ্য অনেকটাই অবস্থান বদল করে মদন মিত্র বলেন, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এসএসকেএম-এর পরিষেবা ভালো। চাপ অনেক। কিন্তু এই পুরো ঘটনায় একটা প্রশ্নই সবচেয়ে জোরালো হচ্ছে, মাথার উপরে শাসকদলের হাত না থাকলে কি স্বাস্থ্য পরিষেবা (West Bengal Health) পাওয়া যাবে না?
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা?
এসএসকেএম হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসক দেখাতে লাইন দিতে হয় ভোরবেলা থেকে। রাত থেকেই রোগী ও পরিজনেরা ভিড় জমান। সকাল দশটায় চিকিৎসক দেখাতে হলে, ভোর তিনটেয় এসে বসে থাকতে হয়। রোগীদের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, অস্ত্রোপচারের দিন পেতে অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন। বিশেষত, কার্ডিওলজি, কার্ডিওভাসকুলার, প্লাস্টিক সার্জারির মতো বিভাগে দেখা যায়, কয়েক বছর পরে অস্ত্রোপচারের দিন পাচ্ছেন রোগী। অনেক সময় এক-দু মাস নয়, অপেক্ষা করতে হয় দেড় থেকে দু'বছর! তালিকা থাকে এতটাই দীর্ঘ! রোগী হয়রানির (West Bengal Health) চূড়ান্ত।
কী বলছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মহল?
রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মহল জানাচ্ছে, এসএসকেএম হাসপাতালে রোগীদের অপেক্ষার লাইন প্রমাণ করে, জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজের ঘোষণাই হয়েছে মাত্র। কাজ কিছুই হয়নি। যদি সব মেডিক্যাল কলেজে সম মানের পরিকাঠামো (West Bengal Health) থাকত, তাহলে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য এত হয়রানির শিকার হতে হত না। অধিকাংশ সময় এই ভিড়ের জন্য সুপারিশ ছাড়া কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না। রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীর সুপারিশেই একমাত্র এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায়। তা না হলে, অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার সুরক্ষিত থাকছে না।
স্বাস্থ্যসাথী কি শুধুই বিজ্ঞাপনে?
রোগীর পরিজনদের একাংশ জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বারবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কথা বলেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেতে বারবার শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের অনুরোধ করতে হয়। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা (West Bengal Health) কেন আগে সুনিশ্চিত হচ্ছে না? কার্ড হাতে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার সুযোগও থাকে না। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেকটাই বিজ্ঞাপনে আটকে থাকছে, অভিযোগ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের রোগী ও পরিবারের একাংশের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours