মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কেন শুধুমাত্র মেয়েরা এবং মহিলাদের রাতে "লক আপ" বা তালাবন্ধ করে রাখা হবে? রাজ্যের ছেলে বা পুরুষদের মত তাদের কেন স্বাধীনতা দেওয়া হবে না? এমনটাই প্রশ্ন করল কেরল হাইকোর্ট (Kerala High Court)। ৭ ডিসেম্বর, বুধবার হস্টেলে কারফিউ জারির সরকারি আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে, কোঝিকোড়ের মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ এমবিবিএস ছাত্রীর করা আবেদন বিবেচনা করার সময় এমনই পর্যবেক্ষণ করেছে কেরল হাইকোর্ট। হস্টেলে মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য কারফিউ জারি করার কেরল সরকারের আদেশের উপর প্রশ্ন করলেন কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি দেবন রামচন্দ্রন।
ঘটনাটি ঠিক কী?
২০১৯ সালে কেরল সরকার, সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির হোস্টেলের ছাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ সরকারি আদেশ জারি করেছিল। সেই আদেশে কোনও কারণ ছাড়াই রাত ৯.৩০টার পর হস্টেলে ছাত্রীদের প্রবেশ এবং প্রস্থান নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সঙ্গে ছাত্রীদের পড়াশোনা করার এবং স্টাডি হল ব্যবহার করার নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দিয়েছিল। এই শর্তগুলি মানলে তবেই ছাত্রীরা হস্টেল পেতে পারেন, এমন শর্ত আরোপ করা হয়। আর কেরল সরকারের এই আদেশকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ওই পাঁচ ছাত্রী। তাঁদের দাবি, কেরল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস অ্যাক্টের ৪২ নম্বর ধারার অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি আরোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদি-ম্যাজিকে ভর করে টানা সপ্তমবার গুজরাট দখলের পথে বিজেপি
বিচারপতি কী বললেন?
গতকাল এই মামলার শেষ শুনানিতে বিচারপতি দেবন রামচন্দ্রনের একক-বিচারপতির বেঞ্চ সাফ জানিয়েছে, মহিলা হস্টেলে কারফিউ জারি করে কোনও উদ্দেশ্য পূরণ করা যাবে না। রাতকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। সরকারের উদ্দেশে বলা হয়েছে, এমন কারফিউ জারি না করে, এটি নিশ্চিত করা উচিত যে, রাতে বাইরে বেরনো যাতে সবার জন্য নিরাপদ হয়। আবার তিনি প্রশ্ন করেন যে, কেন শুধুমাত্র মহিলা বা মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন এবং ছেলে বা পুরুষদের কেন নয়? কেন মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে মহিলাদের জন্য রাত ৯:৩০ মিনিটের পর কারফিউ জারি করা হয়েছে?
বিচারপতি রামচন্দ্রন আরও বলেন, "মেয়েদেরও এই সমাজে থাকতে হবে। রাত সাড়ে ন’টার পর মেয়েরা বেরলে কি পাহাড় কি ধসে পড়বে? ক্যাম্পাসকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। পুরুষদের তালাবদ্ধ করে রাখুন। কারণ তারাই ঝামেলা করে। রাত ৮টার পর পুরুষদের জন্য কারফিউ জারি করুন। মহিলাদের বের হতে দিন।”
এরপর বিচারপতি এই কলেজের ছাত্রীদের অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেছেন, “সব বাবা-মাই যখন চান তাঁদের মেয়েদের বন্দি করে রাখা হোক, তখন সরকার কীভাবে তা না বলতে পারে? তবে রাজ্যের আর কোনও হস্টেলে তো কারফিউ জারি করা হয়নি, তবে সেখানে বসবাসকারী ছাত্রীদের কি বাবা-মা নেই?” তাই তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিধি-নিষেধ আরোপ করায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যাই নিয়ম করা হোক না কেন, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবার জন্য যাতে সমান হয়। রাজ্য এবং সরকারী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মেয়েদের এবং মহিলাদের আটকে রাখার পরিবর্তে তাদের নিজেদের যত্ন নেওয়ার জন্য যোগ্য করে তুলতে হবে।
+ There are no comments
Add yours