মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় নৌসেনার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের ৬টি অত্যাধুনিক সাবমেরিন (AIP Submarine) তৈরি করতে চলেছে জার্মানি। সব ঠিকঠাক চললে, বুধবারই এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে দুই দেশের। জানা গিয়েছে, এই ৬টি সাবমেরিন তৈরি করতে খরচ পড়বে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ভারত সফরে এসেছেন জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস। সূত্রের খবর, আজ পিস্তোরিয়াস মুম্বই যাচ্ছেন। সেখানেই তাঁর উপস্থিতিতে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হবে। এর আগে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে এই চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করেন পিস্তোরিয়াস।
‘প্রোজেক্ট ৭৫ আই’ ঠিক কী?
জানা গিয়েছে, জার্মানির থিসেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘প্রোজেক্ট ৭৫ আই’-এর অন্তর্গত এই ৬টি স্টেলথ কনভেনশনাল (প্রচলিত শক্তিচালিত) সাবমেরিন (AIP Submarine) তৈরি হবে ভারতের মাঝগাও ডকইয়ার্ডে। চুক্তি স্বাক্ষর হবে থিসেনক্রুপ ও মাঝগাও ডকইয়ার্ড লিমিটেডের মধ্যে। বরিসের সঙ্গেই ভারতে এসেছে জার্মান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী সংস্থার শীর্ষ কর্তারা। বুধবার, দুই প্রতিনিধিদলের মধ্যে এই মউ স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তির আওতায়, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতেই ৬টি ডুবোজাহাজ বা সাবমেরিন নির্মাণ করা হবে।
এর আগে ফরাসি সংস্থা ডিসিএনএস-এর সঙ্গে যৌথ ও প্রযুক্তিগত হস্তান্তরের ভিত্তিতে ৬টি কলভরি গোত্রের স্টেলথ স্করপিন সাবমেরিন নির্মাণ শুরু করেছিল ভারত। প্রকল্পের নাম ছিল ‘প্রজেক্ট ৭৫’। ওই প্রকল্পের প্রথম ডুবোজাহাজ ‘আইএনএস কলভরী’কে ২০১৫ সালের অক্টোবরে নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ২০২০-র নভেম্বরে এই গোত্রের শেষ ডুবোজাহাজটি হাতে পেয়েছিল নৌসেনা।
আরও পড়ুন: ৯ বছরের মোদি জমানায় সফল বিদেশ ও সুরক্ষা নীতি, কাশ্মীরে বিলোপ ৩৭০ ধারা!
কী এই ‘এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোপালশন সিস্টেম’?
এবার ‘প্রোজেক্ট ৭৫ আই’-এর জন্যও প্রথমে ফরাসি সংস্থাকেই বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু, ভারতের একটি শর্তেই পিছিয়ে যায় ফরাসি সংস্থা। নতুন সাবমেরিনগুলির জন্য যে যোগ্যতা বা মাপকাঠি নির্ধারণ করেছিল ভারত, তার অন্যতম ছিল ‘এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোপালশন সিস্টেম’ (AIP Submarine) বা সংক্ষেপে এআইপি। এই প্রযুক্তি থাকলে, যে কোনও সাবমেরিন দীর্ঘ সময়ের জন্য জলের নিচে থাকতে পারে। সাধারণত, অ-পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিনকে অক্সিজেন নিতে ও ব্যাটারি চার্জ করতে প্রতি ২-৩ দিন অন্তর জলের ওপরে আসতে হয়।
কেন বাছা হল জার্মান সংস্থাকে?
অন্যদিকে, এআইপি প্রযুক্তির থাকলে টানা ৫-৬ দিন জলের নিচে থাকতে কোনও সমস্যা হয় না সাবমেরিনের। ফলত, সাবমেরিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। দীর্ঘ জায়গা ও সময় ধরে নজরদারির কাজ করতে সক্ষম হয় সাবমেরিনগুলি। ফ্রান্সের সংস্থা জানিয়ে দিয়েছিল, তারা এই প্রযুক্তি দিতে অপারগ। অন্যদিকে, জার্মানির থিসেনক্রুপ হল বিশ্বের এমন দুটি সংস্থার একটি যারা এই প্রযুক্তি (AIP Submarine) ব্যবহার করে থাকে। চুক্তির আওতায় যেমন এআইপি সিস্টেম থাকবে, তেমনই থাকছে কারিগরি সহায়তা, প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রাংশের সরবরাহ, সামরাস্ত্র ও সেন্সর।
দীর্ঘদিন আগে জার্মানি থেকে শিশুমার শ্রেণির ৪টি ডিজেল-বিদ্যুৎ ডুবোজাহাজ কিনেছিল ভারতীয় নৌসেনা। এবার এই চুক্তি স্বাক্ষর হলে, ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রচলিত সাবমেরিনের ক্ষেত্রে নতুন দিশা যুক্ত হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours