মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চিন-পাকিস্তান দ্বৈত সীমান্তের কথা মাথায় রেখে ভারতীয় বায়ুসেনাকে (Indian Air Force) শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া বেশ কয়েক বছর ধরেই করে আসছে মোদি সরকার। সেই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশীয় লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট (এলসিএ) তেজস যুদ্ধবিমানের আরও ১০০টি নতুন ‘মার্ক ১এ’ (LCA Tejas Mk-1A) সংস্করণ কেনার বিষয়ে উদ্যোগী হলো বায়ুসেনা। এই প্রেক্ষিতে একটি প্রস্তাব বায়ুসেনার তরফে কেন্দ্রের কাছে পেশ করা হতে পারে। সূত্রের খবর, হয়ত তা কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পেয়েও যাবে। সব ঠিকঠাক চললে, খুব শীঘ্রই এই বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডকে বরাত দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
বায়ুসেনায় ৩০০টির ওপর তেজস
বায়ুসেনার (Indian Air Force) তরফে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী, ‘তেজস মার্ক ১এ’ (LCA Tejas Mk-1A) যুদ্ধবিমানের আধুনিক সংস্করণের ১০০টি ইউনিট কেনা হবে। খুব দ্রুত এর জন্য বরাত দেওয়া হবে হ্যাল-কে। জানা গিয়েছে, এই ১০০টি বিমান হাতে আসতে প্রায় ১৫ বছর লাগবে। সেটা হওয়ার পর বায়ুসেনার হাতে ৪০টি এলসিএ তেজস মার্ক-১, ১৮০টি এলসিএ তেজস মার্ক-১এ এবং অন্তত ১২০টি তেজস মার্ক-২ (বর্তমানে পরীক্ষার স্তরে) যুদ্ধবিমান থাকবে।
গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বায়ুসেনা প্রধান
বুধবার, বায়ুসেনার (Indian Air Force) সদর দফতরে এলসিএ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরি। সেখানেই বায়ুসেনার উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বায়ুসেনার শীর্ষ আধিকারিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, হ্যাল, ডিআরডিও এবং এডিএ-র শীর্ষ পদাধিকারীরা। সেখানেই এই ১০০টি যুদ্ধবিমান (LCA Tejas Mk-1A) কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। মৌখিকভাবে, হ্যালকে সেই সিদ্ধান্ত জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। আপাতত, অপেক্ষা সরকারি সিলমোহরের।
দেশের গর্ব এলসিএ তেজস
চতুর্থ প্রজন্মের ‘লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট’ গোত্রের তেজস সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এর ৬৫ শতাংশেরও বেশি যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামও ভারতীয় সংস্থাগুলি তৈরি। ছ’দশকের পুরনো রুশ যুদ্ধবিমান মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমানের পরিবর্ত হিসেবে তেজস ব্যবহার করতে শুরু করে ভারতীয় বায়ুসেনা। ভারতীয় বায়ুসেনায় এলসিএ তেজস মার্ক-১ যুদ্ধিবিমানের অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল ২০১৬ সালে। প্রথম স্কোয়াড্রনটি ছিল বায়ুসেনার ৪৫ স্কোয়াড্রন, পোশাকী নাম ‘ফ্লাইং ড্যাগার্স’। তেজস ব্যবহারের আগে, এই স্কোয়াড্রন মিগ-২১ বাইসন ব্যবহার করতো।
চলছে আধুনিকীকরণ
পরবর্তীকালে, ২০২১ সালের গোড়ায় দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ৮৩টি হালকা যুদ্ধবিমান তেজসের উন্নত সংস্করণ মার্ক-১এ (LCA Tejas Mk-1A) কেনার বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি। এখন সেগুলির উৎপাদন চলছে সংস্থার বেঙ্গালুরুর কারখানায়। হ্যাল-এর তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই ওই শুরু হবে এই বিমানগুলোর ডেলিভারি প্রক্রিয়া। তার আগেই, বায়ুসেনার (Indian Air Force) তরফে আরও ১০০টি আধুনিক সংস্করণের যুদ্ধবিমানের বরাত পেতে চলেছে হ্যাল। উৎপাদনের পাশাপাশি, প্রতিনিয়ত এই যুদ্ধবিমানকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক করার প্রক্রিয়া একইসঙ্গে চলছে। তেজসকে সম্প্রতি ‘অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যান্ড অ্যারো রেডার’ (এএসইএ), মিড এয়ার ফুয়েলিংয়ে সজ্জিত করার কাজও সম্পূর্ণ করে ফেলেছে হ্যাল। ইতিমধ্যেই ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য (INS Vikramaditya) থেকে সফল উড়ান এবং অবতরণ পরীক্ষা হয়েছে তেজসের।
শক্তিশালী ‘অস্ত্র’-এ সজ্জিত তেজস
শুধু তাই নয়, তেজস-এর (LCA Tejas Mk-1A) মারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পরীক্ষাও চলছে ক্রমাগত। বুধবারই ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় তেজস যুদ্ধবিমান থেকে পরীক্ষামূলকভাবে নিক্ষেপ করা হয় স্বদেশীয় ‘অস্ত্র’ ক্ষেপণাস্ত্রের। গোয়ায় ডিআরডিও-র তত্ত্বাবধানে এই পরীক্ষা চলে। ‘অস্ত্র’ হলো ১০০ কিলোমিটার পাল্লার মাক ৪.৫ (শব্দের চেয়ে সাড়ে চার গুণ বেশি গতি) বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ বা দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র। এক কথায়, বিমান থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়। এই ক্ষেপণাস্ত্র মূলত আকাশপথে হামলাকারী শত্রু বিমান, হেলিকপ্টার, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম। সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানে ইতিমধ্যেই যুক্ত করা হয়েছে এই মিসাইল। বুধবারের পরীক্ষা সফল হওয়ায়, শীঘ্রই তেজসেও এই বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করা হবে। বর্তমানে এই ক্ষেপণাস্ত্রের আরও উন্নত ও অধিক ১৬০ কিমি পাল্লার সংস্করণ নিয়ে পরীক্ষা চলছে।
The test launch was monitored by the Test Director and scientists of the Aeronautical Development Agency (ADA), Defence Research and Development Organisation (DRDO), Hindustan Aeronautics Limited (HAL) along with officials from the Centre for Military Airworthiness and…
— ANI (@ANI) August 23, 2023
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours