মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কথায় বলে, আঠারো মাসে এক বছর! কিন্তু এই দেশে ১৩ মাসে এক বছর। যদিও সারা বিশ্বে ১২ মাসেই হয় এক বছর। কিন্তু এ এক বিচিত্র দেশ! সারা পৃথিবীর ক্যালেন্ডারে যখন তারিখ ১৮ মে, ২০২৪ তখন এই দেশের ক্যালেন্ডার বলছে, ১০ অগাস্ট, ২০১৬। আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া ক্যালেন্ডার থেকে ৭ বছর ৩ মাস পিছনে চলছে ৷ এই দেশে এমন আজব কিছু ঘটনা ঘটে যা অন্যদের থেকে সম্পূ্র্ণ আলাদা ৷ এখানে ১২ মাসের বদলে ১৩ মাসে বছর ৷
ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডারের বৈশিষ্ট্য
৮৫ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট ইথিয়োপিয়ায় আফ্রিকার দ্বিতীয় জনবসতি বহুল দেশ বলেই পরিচিত ৷ কিন্তু এ দেশের ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়নের থেকে প্রায় ৮ বছর পিছিয়ে আছে ৷ এখানে ১ জানুয়ারি নতুন বছরের বদলে ১৩ মাস পরে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বছর শুরু হয়ে থাকে ৷ ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ন ক্যালেন্ডার শুরু হয়েছিল ৷ এর আগে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হত ৷ পরে যিশু খ্রিস্টের জন্ম সাল অনুযায়ী বর্ষ গণনা শুরু হয়। কিছু দেশ এই গণনার বিরোধিতা করেছিল। ইথিওপিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। আর তাই বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে তাদের ফারাক থেকেই গিয়েছে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে অবশ্য পুরোটা মেলে না। বরং নিজেদের নিয়মেই চলে ইথিওপিয়ার ক্যালেন্ডার।ক্যালেন্ডার চলে বিশেষ নিয়মে। আমাদের যেখানে ১২ মাসে বছর হয়, ওদের বছর ঘোরে ১৩ মাসে। ১১ সেপ্টেম্বর পালন হয় নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে। বছরটি লিপ ইয়ার হলে ১২ সেপ্টেম্বর হয় বর্ষবরণ।
‘ফরগটেন ডেজ’ নিয়ে তৈরি এক মাস
বিশ্বের নিরিখে যখন ২০০৭ সাল তখন আফ্রিকার এই দেশটিতে নতুন শতাব্দীর সূচনা হয়েছিল। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিটি মাস-ই হয় ৩০ দিনে। শুধুমাত্র শেষ মাসটা বাদ। এই মাসটিতেও রয়েছে এক বিশেষ ব্যাপার।গ্রিক ভাষায় ‘প্যাগিউম’ বা ইংরেজিতে ‘ফরগটেন ডেজ’ নিয়ে ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারে তৈরি হয় একটি আস্ত মাস! এই মাসে থাকে মোটে ৫-৬ দিন। ইথিওপিয়ার চার্চকে অর্থডক্স বা গোঁড়া বলেই মানা হয় ৷ ইথিওপিয়ার অর্থোডক্স টিওয়াহেদো চার্চের দিনপঞ্জির সঙ্গেই এদের সরকারি ক্যালেন্ডারের কিছু কিছু মিল পাওয়া যায়।
পর্যটকদের সমস্যা
একটা গোটা দেশে পিছিয়ে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব থেকে। না, অর্থনৈতিক দিক কিংবা শিক্ষাগত দিক থেকে নয়। বরং পিছিয়ে রয়েছে সময়ের দিক থেকে। এদেশের ক্যালেন্ডারের পাতা বদলায় দেরিতে। এই ধরনের ক্যালেন্ডারে ইথিওপিয়ানদের কোন সমস্যাই হয় না। কিন্তু সমস্যা হয় অন্যান্য দেশের বাসিন্দাদের। এই ধরুন বাইরে থেকে কেউ যদি ইথিওপিয়ায় বেড়াতে যেতে চান তাহলে তাকে হোটেল বুকিং করতে বা ফ্লাইট বুকিং করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হবে। কারণ সব তারিখের হিসেব তো করতে হবে সাড়ে সাত বছর আগে গিয়ে। কিন্তু এটা একেবারেই অন্যান্য দেশের বাসিন্দা এবং পর্যটকদের ব্যক্তিগত সমস্যা।
আরও পড়ুন: টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি ভারত-বাংলাদেশ, ম্যাচ কবে, কোথায়?
বৈচিত্র্যে ভরা ইথিওপিয়া
এই দেশের অন্য অনেক বিশেষত্ব রয়েছে ৷ কফি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ ইথিওপিয়া। প্রথমে এই দেশেই কফির উৎপাদন হয়। পুরাতাত্ত্বিকদের মতে এখানেই প্রথম মানবজাতির উৎপত্তি। ইথিওপিয়া একমাত্র আফ্রিকান দেশ যা কখনও ঔপনিবেশিকদের হাতে দমেনি। ১৯৩৫ সালে ইটালি এখানে কলোনি স্থাপন করার চেষ্টা করে। কিন্তু মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই এই দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এখানকার অধিবাসীরা নিজেদের মতো করেই থাকতে ভালবাসেন। অনেকেই ভেগান। যাঁরা পুরোপুরি উদ্ভিজ খাবারের উপর জীবনধারণ করেন। প্রতি বুধ ও শুক্রবার এখানকার লোকেরা উপবাস রাখেন।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা পেয়েছে ইথিওপিয়া ৷ আফ্রিকা মহাদেশের খরা-দুর্ভিক্ষ-সন্ত্রাস পীড়িত এই দেশটিতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। পৃথিবীর সব থেকে বড় ও গভীর গুহা, সব থেকে বেশি গরম এ ছাড়াও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঠিকানা রয়েছে এখানে৷ এই কারণের সারা পৃথিবীর পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন এখানে ৷ বিশ্বের গভীরতম এবং দীর্ঘতম গুহাও রয়েছে এই ‘পোড়া’ দেশে। আবার বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানও এই অঞ্চলে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পূর্ণ এই দেশটি পাশ্চাত্যের প্রচলিত ক্যালেন্ডার থেকে কয়েক বছর পিছিয়ে রয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর ধুমধাম করে নতুন বছর পালন করা হয়ে থাকে ৷ এই নতুন বছরের এক বিশেষ আকর্ষণও রয়েছে ৷ এই হিসাবের ভিত্তিতে ইথিওপিয়ায় ঘুরতে গেলে বুকিং বা অন্য কোনও পরিষেবায় বিশেষ বেগ পেতে হয় ৷ তাই প্রাকৃতিক আশ্চর্যে ভরা আফ্রিকার এই দেশে বেড়াতে যেতে চাইলে খুব সাবধান। ভাল করে ক্যালেন্ডার দেখে অঙ্ক কষে তবেই হোটেল বুক করবেন কিন্তু!
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours