মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোতে যখন গোটা জেলা মেতে ওঠে, তখন অন্য চিত্র দেখা যায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলঘরা গ্রামে। কারণ এই গ্রামের মানুষ দুর্গাপুজোর সময় মনসা পুজোয় মেতে ওঠেন। তাঁরা দেবী দুর্গার আসনে মা মনসাকে বসিয়েই দীর্ঘদিন পুজো করে আসছেন। দুর্গাপুজোর নিয়ম মেনেই এখানে মা মনসা পূজিতা হন। মূলত এখানে মনসা রূপেই দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। পুজোর (Durga Puja 2024) কয়েকটা দিন গ্রামে সকলে মিলে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন। মিলন কেন্দ্র হয়ে ওঠে ফুলঘরা গ্রাম।
একপাশে দেবী লক্ষ্মী, অপর পাশে দেবী সরস্বতী (Durga Puja 2024)
তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গার আসনে মা মনসার পুজো হয়ে আসছে ফুলঘরা গ্রামে। পুরনো নিয়ম-রীতি-রেওয়াজ কিছুই বদলায়নি আজও। জনশ্রুতি রয়েছে, বহুকাল আগে ফুলঘরা গ্রামের বহু ব্যক্তি সর্পাঘাতে মারা গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র মানুষ নয়, সর্পাঘাতে অনেক পশুও মারা গিয়েছিল। বহু কিছু করেও সর্পাঘাতে মৃত্যু প্রতিরোধ করতে পারছিলেন না গ্রামবাসীরা। সেই সময় গ্রামের এক ব্যক্তি গুদর মণ্ডল স্বপ্নাদেশ পান, গ্রামে মনসা পুজো করলেই কেউ আর সর্পাঘাতে মারা যাবে না। এরপর আত্রেয়ী নদীতে একদিন স্নান করতে গেলে মা মনসার কাঠামো ভেসে যেতে দেখেন তিনি। গ্রামবাসীরা সেই কাঠামো তুলে নিয়ে এসে মন্দিরে স্থাপন করে মা মনসার পুজো (Mansa Puja) শুরু করেন। প্রথমে শ্রাবণ মাসে এই পুজো শুরু হয়। গোটা এলাকায় কোনও দুর্গাপুজো না হওয়ায় সেই পুজোর সময়টা বদলে শারদোৎসবে মা মনসার পুজো শুরু হয়। সেই থেকে দুর্গার আসনে মা মনসার পুজো করে আসছে ফুলঘরা বারোয়ারি মনসা পুজো কমিটি। পুজোর কয়েকটা দিন চণ্ডী ও মনসামঙ্গল গান হয়। সকলের আত্মীয়রা গ্রামে আসেন। এখানে মা মানসার একপাশে থাকেন দেবী লক্ষ্মী। অপর পাশে থাকেন দেবী সরস্বতী। পুজোর চার দিন নিয়ম মেনে গ্রামের সকলে নিরামিষ খাবার খান।
নাটক থেকে শুরু করে যাত্রাগান (Durga Puja 2024)
আজও এই পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠেন গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই। বহিরাগত শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা পুজো প্রাঙ্গণে নাটক থেকে শুরু করে যাত্রাগান অনুষ্ঠিত হয়। পুজোর কয়েকটা দিন মেলা বসে ফুলঘরা গ্রামে। এতদিন ছোট মণ্ডপেই পুজো হত মা মনসার৷ তাই ছোট মন্দিরটি ভেঙে বড় করা হচ্ছে বর্তমানে। মন্দির তৈরির কাজ চলছে। এবিষয়ে ভজন মণ্ডল জানান, তাঁদের পূর্বসূরি গুদর মণ্ডল এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁদের জায়গাতেই পুজোটা হয়। তবে এখন বারোয়ারি হিসেবেই পুজোটা হয়। বংশ পরম্পরায় পুরোহিত ও মৃৎশিল্পীর কাজ করে আসছে নির্দিষ্ট পরিবার। পুজোর বায়না দিতেও হয় না বা ডাকতে হয় না। সময়মতো চলে আসেন সকলেই। এখনও পুজোতে (Durga Puja 2024) আগের কাঠামোর বাঁশ দিতে হয়। এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বিভোর সরকার বলেন, ‘‘পুজোর কয়েকদিন আগে গ্রামে ফিরে আসে সব বাড়ির ছেলেমেয়েরা। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। মানত করেন তাঁরা। মানত পূরণ হলে মাকে বিভিন্ন অলংকার দেন।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours