মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সেনার কাছে অত্যন্ত পছন্দের এবং বিশ্বের দরবারে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ১০০ শতাংশ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারতের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র ‘পিনাকা’-র সর্বাধুনিক এবং নতুন গাইডেড উয়েপন সিস্টেমের সফল পরীক্ষা করল ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)।
প্রোভিজনাল স্টাফ কোয়ালিটেটিভ রিকোয়ারমেন্টস (PSQR) এর অংশ হিসাবে এই পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত আনার জন্য ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসর, নির্ভুলতা, সামঞ্জস্য এবং ফায়ার রুটের মতো একাধিক প্যারামিটারও মূল্যায়ন করা হয়েছে। সেনা সূত্রে খবর, এদিনের পরীক্ষা হওয়া পিনাকা মার্ক ২ (Mk-II) সংস্করণের রকেটের পাল্লা প্রায় ৭৫-৯০ কিমি। সেখানে বর্তমানে সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত সংস্করণের পাল্লা প্রায় ৪৫-৬০ কিমি। ফলত, এদিনের পরীক্ষা সফল হওয়ায় বাহিনীতে নয়া গাইডেড সিস্টেমের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অনেকটাই এগিয়ে গেল।
পর্যায়ক্রমে ট্রায়াল এবং সিস্টেম পারফরম্যান্স (DRDO)
পিনাকা অস্ত্রের (Guided Pinaka Weapon) পরীক্ষাগুলি বিভিন্ন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে তিনটি ধাপে পরিচালিত হয়েছিল। দুটি আপগ্রেড ইন-সার্ভিস পিনাকা লঞ্চার ব্যবহার করে প্রতিটি উৎপাদক সংস্থা থেকে মোট বারোটি রকেটকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই অস্ত্রের সিস্টেমে নির্ভুল স্ট্রাইকের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা হয়েছে। মানদণ্ড প্রি-সালভো মোডে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ‘হিট’ নিশ্চিত করেছে।
ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র বিশেষ উদ্যোগ
গাইডেড পিনাকা একটি সম্পূর্ণ দেশীয় সিস্টেম যা ডিআরডিও (DRDO) ল্যাবোরেটরির একটি কনসোর্টিয়াম দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এই রকেট সিস্টেম তৈরি করেছে আরমানেন্ট রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট। সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে রিসার্চ সেন্টার ইমারত, ডিফেন্স রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। গোলাবারুদ উৎপাদন পরিচালনা করতে মিউনিশনস ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং ইকোনমিক এক্সপ্লোসিভস লিমিটেডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড, লারসেন অ্যান্ড টুব্রো পিনাকা লঞ্চার এবং একাধিক সরঞ্জামগুলির নকশা ও উৎপাদনে কাজ করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ডিআরডিও এবং সহযোগী সংস্থাগুলিকে সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পিনাকা সিস্টেমের মূল বৈশিষ্ট্য
পিনাকা (Guided Pinaka Weapon) মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার (এমবিআরএল) একটি বহুমুখী এবং অত্যন্ত কার্যকর আর্টিলারি অস্ত্র, যা বর্ধিত রেঞ্জে দ্রুত এবং বিধ্বংসী করার জন্য নকশা করা হয়েছে। ভগবান শিবের ঐশ্বরিক ধনুকের নামানুসারে নামকরণ হয়েছে। পিনাকা সিস্টেম প্রাথমিকভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রাচীন রাশিয়ান গ্র্যাড বিএম-২১ (BM-21) রকেট লঞ্চারের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এই পিনাকা এমবিআরএল-কে।এই রকেটগুলি (DRDO) নির্ভুল স্ট্রাইকে অত্যন্ত সক্ষম। সিস্টেমটি সুরক্ষিত, উচ্চ-মূল্যের লক্ষ্যগুলির বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ভাবে কাজ করতে পারে।
পিনাকা সিস্টেমে বিশ্বব্যাপী চাহিদাপূর্ণ অস্ত্র। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর্মেনিয়া ইতিমধ্যে এই পিনাকা কিনেছে ভারতের থেকে। শুধু তাই নয়, আজারবাইজানের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে তা ব্যবহারও করছে। অন্যদিকে, ফ্রান্সও এই পিনাকা কেনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দু’দেশের মধ্যে আলোচনাও চলছে। এখন চূড়ান্ত সিলমোহর পড়তে বাকি।
পিনাকা সিস্টেমকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (HIMARS)-এর মতো যোগ্য প্রতিরূপ হিসাবে দেখা হয়। ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতা এবং রফতানিতে ব্যাপক সাফল্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই পিনাকা হল ভারতের প্রথম প্রধান অস্ত্র যা ভারতকে অস্ত্র রফতানিকারক দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ চাপ মৌলবাদীদের! মুসলিম মহিলাদের বোরখা পরতে বাধ্য করা হচ্ছে এই দেশে, বিস্ফোরক গিরিরাজ
ভারতীয় প্রতিরক্ষায় কৌশলগত ভূমিকা
পিনাকা (Guided Pinaka Weapon) সিস্টেম ইতিমধ্যেই যুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয়তাকে প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময়, যেখানে এটি উচ্চ উচ্চতায় পাকিস্তানি বাঙ্কারগুলিকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে আঘাত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠেছিল। পাহাড়ের উপর পাকিস্তানি সেনাদের বাঙ্কার গুঁড়িয়ে দিতে এর প্রথম ব্যবহার করেছিল ভারত। আজ এই অস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য একটি মূল সম্পদ। পাকিস্তানের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) এবং চিন-সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) এই অস্ত্র মোতায়েন রয়েছে। আধুনিক আর্টিলারি যুদ্ধের কথা ভেবে এর কাঠামোতে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও অত্যাধুনিক আপগ্রেডের লক্ষ্য হিসেবে এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লাকে ১২০ কিমি, ১৫০ কিমি, এমনকী ২০০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে (DRDO) আরও মজবুত করবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours