মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কালী পুজোর (Kali puja) এই বিশেষ দিনে তারাপীঠে (Tarapith) মা তারাকে কালী রূপে পুজো করা হয়। তারাপীঠে অন্য কোনও দেবীমূর্তি পুজোর চল নেই। কারণ মা তারা এখানে অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তাই মা তারাই এখানে মা কালী রূপে পুজিত হন। তারাপীঠে কোনও দেবী মূর্তির পুজোর চল নেই। মা তারাকে সামনে রেখেই সমস্ত দেবী মূর্তির পুজো করা হয় তারাপীঠে। দীপান্বিতা কালী পুজোর তিথিতে সেখানে মা তারাকে শ্যামা রূপে পুজো করা হয়। এ দিন মায়ের নিত্য পুজার্চনার পাশাপাশি শ্যামা রূপে মা তারাকে বিশেষ পুজো করা হবে।
এদিন অন্য দিনের মতোই মা তারাকে ভোরবেলা স্নান করানো হয়। এরপর দেবীকে অষ্টধাতুর মুখাভরন, মুণ্ডমালা, মুকুট, সোনার অলঙ্কার, ডাকের সাজ ও ফুল মালা দিয়ে শ্যামা রুপে সাজানো হয়। এরপর শুরু হয় আরতি। মা তারাকে প্রথমে শীতল ভোগ দেওয়া হয়। এদিন মাকে নিত্যভোগও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরেই পতন হচ্ছে তৃণমূল সরকারের? কী বললেন শুভেন্দু?
এরপর মাকে রাত্রি বেলা দেবীকে সোনার অলঙ্কারে ও ডাকের সাজে শ্যামা রুপে সাজানো হয়। আজ গোটা রাত মন্দির খোলা থাকবে। কালীপুজোর দিন তারা মাকে পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয় ৷ ভোগ হিসেবে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, পাঁচ মিশালি তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি। এখানকার অন্নভোগের বিশেষত্ব পোড়া শোলমাছ মাখা। দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষ্যে নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে হয় বিশেষ সন্ধ্যারতি৷ এরপর নিবেদন করা হয় লুচি, পায়েস, সুজি দিয়ে শীতল ভোগ। মন্দিরের এক পুরোহিত বলেন, "তারাপীঠ হল তন্ত্রপীঠ। এটা সাধনপীঠ। কোনও ৫১ পীঠের সতীপীঠ নয়। তাই এখানে তন্ত্রমতে পুজো অর্চনা করা হবে। দেবীকে ভোরবেলায় পঞ্চামৃত দিয়ে তন্ত্রমতে স্নান করানো হয়েছে। এরপর আরতি করা হয়েছে। তারপর গর্ভগৃহ খুলে দেওয়া হয়েছে ভক্তদের জন্য। আজ এখানে বহু তান্ত্রিক আসবেন সাধনার জন্য।"
এদিকে কালীপুজো উপলক্ষে ভক্ত সমাগম হয়েছে দক্ষিণেশ্বর, লেক কালী বাড়ি, ঠনঠনিয়া কালী বাড়ি, কামাখ্যায়। ৫১ সতীপীঠের শেষ দুটি পীঠ রয়েছে বীরভূমে। একটি, বোলপুরের কঙ্কালীতলা, আরেকটি নলহাটি। দীপান্বিতা অমাবস্যায় এই দুই মন্দিরে মহা ধূমধামের সঙ্গে কালীপুজো হয়। তারাপিঠের পাশাপাশি কালীপুজোর বিশেষ আয়োজনে সেজে উঠেছে কঙ্কালীতলা।
দক্ষিণেশ্বরে দেবী পূজিতা হন মা ভবতারিণী রূপে। ভোরে দেবী ভবতারিণীর বিশেষ আরতি পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। ঘট স্নানের পর মায়ের পুরনো ঘটেই নতুন করে গঙ্গার জল ভরে প্রতিষ্ঠা করা হয় কালীপুজোর দিন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের দেখানো পথেই পুজো পান এখানে মা ভবতারিণী। ভোগও অতি সাধারণ। ভোগে নিবেদন করা হয় সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকমের ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকমের মাছের পদ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। দক্ষিণেশ্বর কিছুটা দূরেই আদ্যাপীঠ মন্দিরে রয়েছে। সেখানেও কালীপুজোর রাতে আদ্যা মায়ের বিশেষ পুজো হয়। অন্যান্য দিনের মতো সন্ধ্যারতিও হয়। সেই সন্ধ্যারতি দেখতে অসংখ্য ভক্ত সমাগম করেন।
৫১ সতীপীঠের অন্যতম পীঠ হল কালীঘাট। ভোগে দেওয়া হয়, বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। তবে রাতে মাকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে। লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে।
উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে সিদ্ধেশ্বরী কালী রূপে পূজিতা হন মা। কথিত আছে যে অতীতে ডাকাতদের আক্রমণ থেকে সতর্ক করার জন্য এই মন্দিরের ঘণ্টা বাজিয়ে ঠনঠন শব্দ করা হত। তাই নাম ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। কালীপুজোর রাতে ভোগ দেওয়া হয়, লুচি, পটলভাজা, ধোঁকা বা আলুভাজা, আলুর দম ও মিষ্টি।
শ্যামাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ নৈহাটির অরবিন্দ রোডের বড়মা। মূর্তির উচ্চতা ২১ ফুট। মা এখানে দক্ষিণাকালী রূপে পূজিত হন। বড়মার পুজো উপলক্ষে সকাল থেকেই সাজো সাজো রব নৈহাটিতে।
জনপ্রিয়তার নিরিখে পিছিয়ে নেই কলকাতার লেক কালীবাড়িও। ভোররাত থেকেই সেখানে ভিড় জমিয়েছেন ভক্তরা।
+ There are no comments
Add yours