তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
ডায়াবেটিস (Diabetes) আর বয়স্কদের রোগের তালিকায় আটকে নেই! তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে এই রোগ এখন শিশুদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে। বিশেষত ১২ বছর পেরলেই ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে! যার প্রভাব পড়ছে পড়াশোনা, খেলাধুলোয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সচেতনতা না বাড়লে বিপদ বাড়বে! অভিভাবক থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সর্বত্র ডায়াবেটিস নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার। না হলে বড় বিপদ হতে পারে!
কাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তিরিশ পেরনোর আগেই অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। সন্তান জন্মের পর তাঁদের বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। শিশুরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, যে সব শিশুর জন্মের সময় ওজন ৩.৫ কেজির বেশি থাকে, তাদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, পরবর্তীতে তাদের স্থূলতা বাড়ার ঝুঁকি বেশি। ফলে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। পাশপাশি, যাদের জন্মের সময় ওজন ২.৫ কেজির কাছাকাছি থাকে, কিন্তু তিন-চার বছর বয়স থেকেই ওজন মারাত্মক বাড়তে থাকে, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দশ জন ডায়াবেটিস (Diabetes) আক্রান্তের মধ্যে আগে গড়ে ২-৩ জন শিশু টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হত। কিন্তু গত দশ বছরে দেখা যাচ্ছে, প্রতি দশ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে গড়ে ৫-৬ জন শিশু টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী থাকছে। যা যথেষ্ট উদ্বেগের। এছাড়া ভারতে শিশুদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের প্রকোপও বাড়ছে।
কেন স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে ডায়াবেটিস বাড়ছে?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, জীবন যাপনের বদলে ডায়াবেটিসের (Diabetes) ঝুঁকি বাড়ছে। ১২-১৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের শারীরিক কসরতের প্রবণতা কমে গিয়েছে। তারা অধিকাংশ সময়েই বসে থাকছে। কখনও পড়াশোনা, কখনও ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল নিয়ে বসে থাকছে। মাঠে খেলাধুলোর সময় একেবারেই কম। দিনের খুব কম সময় তারা শারীরিক কসরত করে। ফলে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া আধুনিক জীবনের খাদ্যাভ্যাস এই রোগের প্রকোপ বাড়ার অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, খুব কম বয়স থেকেই এখন নানান প্রসেসড খাবারে অভ্যস্ত। বার্গার, পিৎজা, হটডগের মতো খাবার স্থূলতা ডেকে আনে। তাছাড়া, ডোনাট, চকোলেট খাওয়ায় অভ্যস্ত অনেক শিশু। এগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস কি পড়াশোনায় প্রভাব ফেলছে?
সম্প্রতি সুইডেনের একদল গবেষক স্কুল পড়ুয়াদের ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ডায়াবেটিস আক্রান্ত স্কুল পড়ুয়াদের মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা হয়। তাই তাদের অনেক সময়ই বুঝতে অসুবিধা হয়। ডায়াবেটিস (Diabetes) আক্রান্ত পড়ুয়ারা বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে, নিয়মিত স্কুল যেতে পারে না। অনুপস্থিতির হার বেশি হয়। এর প্রভাব তাদের পড়ার ক্ষেত্রেও পড়ে। পাশপাশি খেলাধুলোর প্রতি অনীহা তৈরি হয়।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকরা কীভাবে সতর্ক হবেন?
চিকিৎসকদের পরামর্শ, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের বাড়তি সতর্কতা জরুরি। তবেই ডায়াবেটিসের মতো রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। শিশুরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সন্তানের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেই রক্ত পরীক্ষা জরুরি। বিশেষত যদি সন্তানের স্থূলতার সমস্যা দেখা যায় কিংবা বারবার জল খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। পরিবারের কেউ ডায়াবেটিসে (Diabetes) আক্রান্ত থাকেন, তাহলে বছরে অন্তত একবার রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা জরুরি শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা।
অতিরিক্ত তেলে ভাজা আর মশলা দেওয়া খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। শিশুদের ডায়েটে সে দিকে বাড়তি খেয়াল রাখা জরুরি। নিয়মিত ডোনাট, চকোলেট একেবারেই দেওয়া যাবে না। শিশুদের জলখাবারে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার দিতে হবে। কর্নফ্লেক্স, দুধ, কিসমিস, কাজুর মতো ড্রাই ফ্রুট, আপেল, পেয়ারা, নাশপাতির মতো ফল খেতে হবে। ভাতের পরিমাণ না বাড়িয়ে ডাল, সব্জি, চিকেন, মাছের মতো খাবার বেশি খেতে হবে। তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।
স্কুল কর্তৃপক্ষকেও ডায়াবেটিস নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, যে হারে ডায়াবেটিস বাড়ছে, তাতে অধিকাংশ স্কুলে বহু পড়ুয়া এই রোগে আক্রান্ত থাকবে। তাদের সুস্থ রাখতে স্কুলে আলাদা ভাবে মেডিক্যাল স্টোর রাখতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা মাপতে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours