মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বয়স সবে সাড়ে তিন পেরিয়েছে। তারই মধ্যে সাদা-কালো খোপে দাপট দেখাতে শুরু করেছে কৈখালির ছোট্ট অনীশ। কনিষ্ঠতম দাবাড়ু হিসাবে ফিডে রেটিং (Chess World Record) পেল বাংলার খুদে অনীশ সরকার। ভেঙে দিল ভারতেরই তেজস তিওয়ারির রেকর্ড। গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়ার ছাত্র অনীশ সরকার। এন্টালির সেন্ট জেমস স্কুলের লোয়ার নার্সারির এই পড়ুয়া। অঙ্কই তার ধ্যান-জ্ঞান। দাবার বোর্ড তার স্বপ্ন। ৩ বছরের জন্মদিনে মামা তাকে ভালবেসে দাবা উপহার দিয়েছিল। সেই দাবাই বদলে দিল ছোট মনের কল্পনা।
কোন পথে বিশ্ব রেকর্ড
দাবার (Chess World Record) বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ফিডে রেটিং অর্জন করতে হলে কোনও ফিডে রেটিং প্রাপ্ত দাবাড়ুকে হারিয়ে এক পয়েন্ট পেতে হবে। তার জন্য সর্বোচ্চ ২৬ মাস সময় দেওয়া হবে, পাঁচজন দাবাড়ুর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে অক্টোবর মাসে তিনজনের বিরুদ্ধে খেলেই সেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছে সাড়ে তিন বছর বয়সি অনীশ। গত মাসে রাজ্য স্তরের অনূর্ধ্ব ৯ এবং অনূর্ধ্ব ১৩ দুটি বিভাগের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল অনীশ। অনূর্ধ্ব ১৩ বিভাগে একটিও ম্যাচে জিততে পারেনি সে। অনূর্ধ্ব ৯ বিভাগে খেলতে নেমেও প্রথম ম্যাচে হারতে হয়। তবে সেখান থেকে দুরন্ত কামব্যাক খুদে অনীশের। পরপর দুই ম্যাচে ফিডে রেটিংপ্রাপ্ত দাবাড়ুকে চেকমেট করে সকলকে চমকে দেয় বাংলার দাবাড়ু। দুই পয়েন্ট পেয়ে ফিডে রেটিং অর্জন করা নিশ্চিত করে ফেলে সে। মাসের প্রথম দিনেই প্রকাশিত হয়েছে নভেম্বরের ফিডে রেটিং। দেখা যাচ্ছে, ১৫৫৫ পয়েন্ট রয়েছে অনীশের নামের পাশে। এত কম বয়সে আর কোনও দাবাড়ু ফিডে রেটিং অর্জন করতে পারেনি। সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে ফিডে রেটিং পাওয়ার বিশ্বরেকর্ড এতদিন ছিল ভারতেরই তেজস তিওয়ারির দখলে। গত বছরই মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ফিডে রেটিং অর্জন করেছিল সে।
কোচের আশা
ছাত্রের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার (Chess World Record) দিব্যেন্দু বড়ুয়া। প্রথমে নিজের অ্যাকাডেমিতে অনীশকে নিতেই চাননি দিব্যেন্দু। কারণ ৫ বছরের আগে তাঁর অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয় না। কিন্তু বারবার গুরুর পরীক্ষায় সফল হয় ছোট্ট অনীশ। দিব্যেন্দু বাধ্য হন তাকে সুযোগ দিতে। এখন অ্যাকাডেমিতেই দিনের ৭-৮ ঘণ্টা কাটে অনীশের। দিব্যেন্দু বললেন, “প্রথম দিন আমি পরীক্ষা নিয়েছিলাম, এখন সেই ছেলে আমাকে বিভিন্ন ঘুঁটি সাজিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নেয়।” দিব্যেন্দু বললেন, “ও বিস্ময় বালক। মাত্র ক’মাস হয়েছে খেলছে। তাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছে ও কতটা প্রতিভাধর। তবে ফিডে রেটিং পাওয়াটাই তো সব নয়। এখন অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। অনীশ সেটা পারবে। ওর শেখার ইচ্ছা আছে। এখন ও জানতে চায় বিভিন্ন জিনিস। শিখতে চায়। আমাকে জিজ্ঞেস করে দাবা খেলার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শব্দের মানে। ও হয়তো এখনই সবটা বোঝে না। কিন্তু বোঝার ইচ্ছেটা রয়েছে পুরো। দিনে সাত-আট ঘণ্টা অ্যাকাডেমিতে কাটায়। খেলা ছেড়ে উঠতে চায় না। আমি মাঝেমাঝে বাড়িতেও ডেকে নিই। আশা করছি আরও অনেক সাফল্য পাবে অনীশ।”
আরও পড়ুন: ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা’, জেনে নিন রবিবার ভাইকে টিকা পরানোর শুভ সময়
গর্বিত মা-বাবা
অনীশ এতই ছোট যে চেয়ার বসে ঘুঁটিতে হাত পায় না। চেয়ারের উপর হাঁটু মুড়ে বসে দাবা খেলতে হয়। উচ্চতা কম হলেও ইতিমধ্যেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে তাকে নিয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম অনীশের। বাবা স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক। মা গৃহবধূ। অনীশকে নিয়েই সময় কাটে মায়ের। নাম প্রকাশ্যে আনতে অনিচ্ছুক তাঁরা। ছেলের কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত হলেও চান না তাঁদের পরিচয় জানুক সকলে। নেপথ্যে থেকেই ছেলেকে এগিয়ে দিতে চাইছেন তাঁরা। অনীশের মা-এর কথায়, “অন্য কোনও খেলনার থেকে দাবাটাই মনে হয়েছিল বেশি সুরক্ষিত। ও তো খুব ছোট, কোনও কিছু পেলেই মুখে দেওয়া অভ্যেস। দাবার ঘুঁটিগুলো বড়, তাই মুখে দিলেও গিলে ফেলতে পারবে না। সেই কারণেই দাবা নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হত ওকে। ইউটিউব দেখে দেখে খেলা শিখত। আমি খেলতে বসলে ওর সঙ্গে পাঁচ দানও খেলতে পারি না। দাবার প্রতি এই ভালবাসা দেখেই দিব্যেন্দু বড়ুয়ার কাছে নিয়ে যাই। ওঁর হাতেই তৈরি হচ্ছে অনীশ।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours