মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বছর তিরিশের জয়িতা দত্ত। শ্বাসকষ্ট নিয়ে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দিন তিনেকের মধ্যে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়। ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা জানান, তার পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। পরিবার জানায়, হাসপাতালে জয়িতার বিছানায় বিড়াল এসে বসতো। খাবারেও মুখ দিয়েছে। আর সেই থেকেই রোগীর সংক্রমণ বেড়েছে।
বছর পঞ্চাশের রজত মজুমদার ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়েই আরজিকর হাসপাতালের বক্ষঃরোগ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার বালাই নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। শৌচালয়ের অবস্থা দুর্বিষহ। আর অপরিচ্ছন্ন শৌচালয় ব্যবহারের জেরে দেহে অন্য সংক্রমণ হয়ে যাচ্ছে। জয়িতা দত্ত কিংবা রজত বাবুর পরিবারের অভিযোগ কোনও ব্যতিক্রম নয়। আরজিকর হাসপাতালের বক্ষঃরোগ বিভাগের অপরিচ্ছন্ন ও নজরদারির অভাবের এমন একাধিক অভিযোগ জমা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না।
রোগীর পরিবারের অভিযোগ
রোগীর পরিবারের অভিযোগ, নীল সাদা বহুতলের ঝকঝকে চেহারা বাইরে থাকলেও, ভিতরের পরিস্থিতি একেবারেই খারাপ। বক্ষঃরোগ বিভাগে নূন্যতম পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয় না। সব সময় কুকুর, বেড়াল ঘুরে বেড়ায়। শুধু ওয়ার্ডের ভিতরে নয়, রোগীর বিছানাতেও কুকুর, বেড়ালের যাতায়াত লেগে থাকছে। রোগীর দুপুর কিংবা রাতের খাবার দীর্ঘক্ষণ খোলা অবস্থায় ওয়ার্ডের বাইরে পড়ে থাকে। সেই খাবার রোগীকে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন বেড়ালে কামড়ানোর জেরে রোগী ভোগান্তির ঘটনাও বেড়েছে। এমনকি ডিপথেরিয়ার টিকা নিতে রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠানোও হয়েছে। রোগীর পরিবারের একাংশের অভিযোগ, রোগী ভর্তির পরেই রোগীদের হাতে একটা করে লাঠি দেওয়া হয়। বলে দেওয়া হয়, হাসপাতালে বেড়ালের উৎপাত রয়েছে। তাই প্রয়োজনে লাঠি ব্যবহার করতে হবে। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা করাতে গিয়ে, বেড়াল তাড়াবেন, এমন ব্যবস্থায় যথেষ্ট বিরক্ত রোগীর পরিজন।
আরও পড়ুন: আসানসোলের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ শুভেন্দুর, আহত-নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা
এক রোগীর আত্মীয় বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী কয়েক দিন আগেই বলেছেন তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করান না। এমন পরিস্থিতি তিনি জানেন বলেই চিকিৎসা করাতে যান না। রোগীকে যদি চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেড়াল মারতে হয়, আরও নানান রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেটাকে কি হাসপাতাল বলে? কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব? "
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বক্ষঃরোগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়েই অধিকাংশ রোগী ওই বিভাগে ভর্তি হন। তার উপরে যদি অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকেন, তাহলে আরও বিপদ বাড়তে পারে। দেহের অন্য কোনও অঙ্গে সংক্রমণ হলে রোগীর প্রাণনাশের আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাই এই বিভাগের স্বচ্ছতা নিয়ে বাড়তি নজরদারি জরুরি। এ বিষয়ে আরজিকর হাসপাতালের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য জানান, পরিচ্ছন্নতার দিকে যথেষ্ট নজর দেওয়া হয়। কিন্তু কুকুর, বেড়াল আটকানো সব সময় সম্ভব নয়। তবে রোগীদের যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours