মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতে হিন্দুদের কাছে রামায়ণ-মহাভারত শুধুই মহাকাব্য নয়। এগুলো ধর্মগ্রন্থের সমান। চেতনাকে ঠিক পথে চালনা করার এক পথ প্রদর্শক। প্রায় প্রত্যেক হিন্দু বাড়িতেই পাওয়া যায় এই দুই গ্রন্থ। এই দুই মহাকাব্য হিন্দুরা পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষদেরও আকর্ষণ করার শক্তি রয়েছে রামায়ণ-মহাভারতের, সেটা জানতেন কি?
সম্প্রতি এমনই এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হল দেশ। 'রামায়ণ কুইজ়' (Ramayana Quiz) - এ প্রথম স্থান অধিকার করলেন দুই মুসলিম যুবক (Muslim Students)। কী বিশ্বাস হচ্ছে না! এমনটাই ঘটেছে 'ডিসি বুক্স' (DC Books) নামের এক প্রকাশনী সংস্থার আয়োজিত কুইজ় প্রতিযোগিতায়। মহম্মদ জাবির পিকে (Mohammed Jabir P K) এবং মহম্মদ বাসিত এম (Mohammed Basith M), মালাপ্পুরমের দুই মুসলিম ছাত্র অনলাইন রামায়ণ কুইজে় শীর্ষ স্থান অধিকার করেন। তাঁরা দুজনেই কেকেএইচএম ইসলামিক অ্যান্ড আর্টস কলেজ, ভ্যালেনচেরিতে ওয়াফি কোর্স করছেন। প্রতিযোগিতাটিতে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: সিএসআইআরে ডিজি পদে প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী, জানুন পরিচয়
আপনি যদি মহম্মদ বসিত এম- কে রামায়ণ থেকে তাঁর প্রিয় শ্লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, তিনি অবিলম্বে 'অযোধ্যাকাণ্ড'-এর শ্লোক আবৃত্তি করে শোনাবেন। যেখানে ক্রোধে ফেটে পড়ছেন লক্ষণ। আর ভাইকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন দাদা রাম। বোঝাচ্ছেন রাজত্ব, রাজপাট কতটা অপ্রাসঙ্গিক এবং অসাড় বিষয়।
শুধু যে শ্লোক উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করেন তা নয়, প্রতিটা শ্লোকের মানেও বোঝাবেন মিষ্টি স্বভাবের বাসিত। বিশেষত 'আধ্যাত্ম রামায়ণ' পাঠ করেন বাসিত। রামায়ণের মালায়ালি ভাষায় অনুবাদের নাম 'আধ্যাত্ম রামায়ণ'। অনুবাদ করেছেন থুনচাথু রামানুজন এজুথাচান। এই কুইজ় প্রতিযোগিতায় পাঁচজন বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন এই দুই মুসলিম যুবক, মহম্মদ জাবির পিকে এবং মহম্মদ বাসিত এম।
আরও পড়ুন: অপেক্ষার অবসান, উড়ান শুরু আকাসা এয়ারের
এই দুই যুবকের দাবি, তাঁরা ছোটবেলা থেকেই এই মহাকাব্যের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু মূলত ওয়াফি কোর্সে যোগদানের পর রামায়ণ এবং হিন্দুধর্ম সম্পর্কে গভীরভাবে পড়তে এবং জানতে শুরু করেন। জাবির বলেন, "প্রত্যেকেরই উচিত রামায়ণ ও মহাভারত এই মহাকাব্যগুলি পড়া। কারণ মহাকাব্যগুলি দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের অংশ। আমি বিশ্বাস করি যে এই গ্রন্থগুলো শেখা এবং বোঝা আমাদের দায়িত্ব।"
বাসিত এ বিষয়ে বলেন, "মহাকাব্য পড়লে অন্য ধর্ম, তার মানুষদের সম্পর্কে আরও ভালো করে জানা যায়। কোনও ধর্মই ঘৃণার শিক্ষা দেয় না। শুধু শান্তি ও সম্প্রীতির প্রচার করে। এই কুইজে় জয় আমাকে আরও গভীরভাবে মহাকাব্য সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করেছে।" জাবির বলেন, "রামকেও তাঁর পিতা দশরথকে দেওয়া কথা রাখতে রাজ্য ত্যাগ করতে হয়েছিল। আমরা যাঁরা এই সময়ে বাস করছি, যখন ক্ষমতা দখলের অবিরাম যুদ্ধ চলছে, সেখানে রামায়ণ মহাকাব্যের রামের মতো চরিত্র থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে।
ভারতের ৯৭টি মুসলিম কলেজ ক্যাম্পাসে ওয়াফি পড়ানো হয়। আট বছর দীর্ঘ এই কোর্স। মূলত প্রধান ধর্মগুলি সম্পর্কে পড়ানো হয় এই কোর্সে।
+ There are no comments
Add yours