Durga Puja 2024: “নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ”, নবপত্রিকা আসলে মা দুর্গারই বৃক্ষ রূপ!

Kola Bou: 'কলা বউ' কার স্ত্রী জানেন? এর সঙ্গে দুর্গাপুজোর কী সম্পর্ক? 'কলা বউ' কেন পুজো করা হয়?
Durga_Puja_2024_(7)
Durga_Puja_2024_(7)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহা সপ্তমীর (Durga Puja 2024) সকালে জলাশয় থেকে ঘটে করে নিয়ে আসা হয় জল। সেই জলেই হয় দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা। এই ঘটের সঙ্গেই স্নান করিয়ে নিয়ে আসা হয় নবপত্রিকাকে। নবপত্রিকা স্নান (Kola Bou) লোকমুখে কলাবউ স্নান হিসেবেই বেশি পরিচিত। কোনও কোনও শাস্ত্রবিদের মতে, এক সময় যখন দেবী প্রতিমা রূপকল্পনা হয়নি, তখন মানুষ দুর্গাপুজো করতেন নবপত্রিকা বসিয়ে। পরে, কল্পনা হওয়ার পর তৈরি হয় মূর্তি। তার পর থেকে মহামায়ার সঙ্গে পুজো পেয়ে আসছে নবপত্রিকাও।

কলা বউ আসলে কে? (Durga Puja 2024)

দেবী দুর্গার (Durga Puja 2024) পরে যিনি সচরাচর লোকের চোখে পড়েন, তিনি হলেন কলাবউ। সাধারণ মানুষ ভাবেন, তিনি গণেশের স্ত্রী। আসলে কিন্তু তা নয়। কারণ, নবপত্রিকা থাকেন গণেশের ডান দিকে। হিন্দু মতে, স্ত্রী থাকবেন পুরুষের বাম পাশে। অর্থাৎ নবপত্রিকার সঙ্গে গণেশের কোনও সম্পর্কই নেই। তবে "কলা বউ" আসলে কার বউ? এক কথায় উত্তর হবে, শিব জায়া অর্থাৎ শিবের বউ। "কলা বউ" আসলে মা দুর্গার বৃক্ষ রূপ। তাই তিনি গণেশের স্ত্রী নন, বরং মা। এ প্রসঙ্গে জানা দরকার যে "কলা বউ" প্রচলিত নাম হলেও এটি ন'টি উদ্ভিদের সমষ্টি বা সমাহার। তাই "কলা বউ"-এর আসল নাম "নবপত্রিকা"। এই ন'টি উদ্ভিদের বর্ণনা রয়েছে এই শ্লোকটিতে-রম্ভা কচ্চী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ। অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা। রম্ভা (কলা), কচ্চী (কচু), হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মানকচু ও ধান গাছ। নবপত্রিকায় একটি পাতা যুক্ত কলাগাছের সাথে অপর আটটি উদ্ভিদকে শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। তার পরে পরানো হয় শাড়ি-সিঁদুর।

কেন কলা বউ পুজো করা হয়?

অতি প্রাচীন কাল থেকেই প্রকৃতি পুজো (Durga Puja 2024) ভারতীয় উপমহাদেশের রীতি। অগ্নি, জল, বায়ু, মাটি, পাহাড়, গাছ, নদী সব কিছুতেই ঈশ্বর বিরাজমান, এই ধারণা থেকেই "নবপত্রিকা" বা "কলা বউ"-এর পুজো। উদ্ভিদ প্রকৃতির সজীব অংশ। খাদ্যশস্য, নিঃশ্বাসের বাতাস, জীবনদায়ী ওষুধ-এ সবকিছুতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উদ্ভিদ। ভক্তদের কল্যাণকারী মা দুর্গা তাই অধিষ্ঠাত্রীদেবী নবপত্রিকার এই উদ্ভিদগুলিতে। তিনি সর্বত্র বিরাজমান। নবপত্রিকা মা দুর্গার বৃক্ষ রূপ হিসেবে পরিচিত। মহা সপ্তমীর সকালে "নবপত্রিকা"-র পুজোতে মন্ত্র পাঠ করা হয় "নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ" যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় - নবপত্রিকা বাসিনী নবদুর্গা।

নবপত্রিকার সঙ্গে দুর্গাপুজোর সম্পর্ক

নবপত্রিকার সঙ্গে দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) সম্পর্ক নিয়ে পণ্ডিত মহলে নানা মত রয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণে নবপত্রিকার কোনও বিধান নেই। আবার কালিকা পুরাণে সপ্তমীতে "পত্রিকা" পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। কৃত্তিবাসী রামায়ণে রামচন্দ্র কর্তৃক নবপত্রিকা পুজোর কথা আছে। "বাঁধিল পত্রিকা নববৃক্ষের বিলাস"। পণ্ডিতদের মত অনুযায়ী, সম্ভবত শবর সম্প্রদায় কোনও এক সময়ে ন'টি উদ্ভিদের মাধ্যমে মা দুর্গার পুজো করতেন। সেই থেকেই হয়তো "নবপত্রিকা" বা "কলা বউ" পুজো হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতির বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন ১৯৬১ সালের অ্যাকাডেমিক পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক শশিভূষণ দাশগুপ্ত। নবপত্রিকা পুজোর বিষয়ে তিনি তাঁর "ভারতের শক্তি সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য গ্রন্থের" ২৫-২৬ পাতায় লিখছেন, "বলা বাহুল্য এসবই হল পৌরাণিক দুর্গা দেবীর সঙ্গে এই শস্য দেবীকে (পড়ুন "নবপত্রিকা") সর্বাংশে মিলিয়ে নেওয়ার এক সচেতন চেষ্টা। এই শস্য দেবী, মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ। সুতরাং আমাদের জ্ঞাতে অজ্ঞাতে দুর্গা পুজোর ভিতরে এখনও সেই আদিমাতা পৃথিবীর পুজো, অনেক খানি মিশিয়া আছে "। যুগ যুগ ধরে হওয়া সেই প্রথা ও ঐতিহ্যকে এখনও ধরে রেখেছেন সকলে।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles