মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উনবিংশ শতকের প্রাণপুরুষ তিনি। সকল জীবের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন, সেই বোধদয় জাগিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনিই শিখিয়ে গিয়েছিলেন (Quotes Of Swami Vivekananda), ‘‘এস, মানুষ হও। নিজেদের সংকীর্ণ গর্ত থেকে বাইরে গিয়ে দেখ, সব জাতি কেমন উন্নতির পথে চলেছে। তোমরা কি মানুষকে ভালোবাসো? তোমরা কি দেশকে ভালোবাসো? তাহলে এস, আমরা ভালো হবার জন্য, উন্নত হবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করি। পেছনে চেয়ো না-অতিপ্রিয় আত্মীয়স্বজন কাঁদুক; পেছনে চেয়ো না, সামনে এগিয়ে যাও।’’ ১৯০২ সালের ৪ জুলাই স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) প্রয়াণ দিবস। বেলুড় মঠে সেদিন রাত ন'টার কিছু পরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন স্বামীজি। সকাল থেকেই দিনটা তাঁর শুরু হয়েছিল অন্যান্য দিনের মতোই। সারা দিনভর চলেছিল কর্মব্যস্ততা। ভক্তদের মনে বিন্দুমাত্র আশঙ্কা দেখা দেয়নি যে স্বামীজির কিছু হতে পারে! কেমন ছিল তাঁর শেষ দিনটা আসুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রয়াণের দিন কিনেছিলেন বর্ষার প্রথম ইলিশ
নিজের অভ্যাস মতোই ১৯০২ সালের ৪ জুলাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়েন বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda)। সেদিন ছিল মেঘে ঢাকা আকাশ। পড়ছিল বৃষ্টি। জানা যায়, বর্ষার সেই দিনে সকালে মন্দিরে দীর্ঘ সময় পূজা-অর্চনায় মগ্ন ছিলেন স্বামীজি। সকাল থেকে শারীরিক অসুস্থতার কোনও লক্ষণই ছিল না। পূজা-অর্চনার পরে সকালের প্রাতঃরাশ হিসেবে দুধ-ফল খান স্বামীজি। গুরুভাইদের সঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হাসিঠাট্টাও করেন। বর্ষার প্রথম ইলিশও কেনেন সেদিন। তারপর স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে গঙ্গাপাড়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করেন। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি ধ্যানে বসেন। এগারোটা নাগাদ ধ্যানভঙ্গ হয়। জানা যায়, এর পরেই স্বামীজি গান গেয়ে ওঠেন, ‘‘শ্যামা মা কি আমার কালো....’’
দুপুরে শিষ্যদের পড়ালেন সংস্কৃত ব্যাকরণ
ভোজন রসিক স্বামীজির (Swami Vivekananda) দুপুরের পাতে ছিল ইলিশের নানা পদ। ইলিশের ঝোল, ভাজা বেশ তৃপ্তি করে খান তিনি। জানা যায়, তারপর দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়েন। অল্প সময় পরে আবার জেগে ওঠেন। এরপরেই জানান, তাঁর মাথা ব্যথা করছে। পরে লাইব্রেরিতে গিয়ে ব্যাকরণ পড়াতে থাকেন শিষ্যদের। বিকেল পর্যন্ত চলে পড়াশোনা। তারপর এক কাপ গরম দুধ খেয়ে স্বামী প্রেমানন্দকে নিয়ে বেলুড়বাজারে ভ্রমনে যান। অনেকটাই হাঁটেন সেদিন, প্রায় ২ মাইল। বিকাল পাঁচটা নাগাদ মঠে ফিরে বিবেকানন্দ প্রেমানন্দকে বলেন, ‘‘আজ আমার শরীর খুব ভালো আছে।’’
মহাপ্রয়াণ
১৯০২ সালের ৪ জুলাই সন্ধ্যায় ধ্যানে বসেন স্বামীজি (Swami Vivekananda)। জানা যায়, ঠিক পৌনে আটটা নাগাদ শিষ্যদের বলেন, ‘‘গরম লাগছে জানলা খুলে দাও।’’ এরপরেই মেঝেতে পাতা বিছানাতে তিনি শুয়ে পড়েন। রাত ৯টা নাগাদ চিৎ অবস্থা থেকে তিনি বাঁ দিকে ফেরেন। তারপরেই ডান হাত কেঁপে ওঠে। তাঁর কপালে ঘাম দেখা যায়। শিশুর মতো কেঁদে ফেলেন স্বামীজি। জানা যায়, রাত্রি ৯টা ০২ থেকে ৯টা ১০-এর মধ্যবর্তী সময়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কিছুক্ষণ চুপ করে ফের আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এরপরই তাঁর মাথা নড়ে ওঠে। বালিশ থেকে পড়ে যায় তাঁর মাথা। চোখ তখন স্থির। শিষ্যদের ধারণা ছিল, স্বামীজীর সমাধি হয়েছে। কিন্তু পরে ডাক্তার এসে জানান তিনি নেই।
মহাপ্রয়াণের কথা স্বামীজি (Swami Vivekananda) কি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন?
তাঁর মহাপ্রয়াণের কথা স্বামীজি কি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন? কারণ তিনি শিষ্যদের বলতেন, ৪০ পেরোবেন না তিনি। প্রয়াণও হয় মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। মহাপ্রয়াণের দু’দিন আগেই ভগিনী নিবেদিতাকে নিজের সামনে বসিয়ে পঞ্চব্যঞ্জন খাইয়েছিলেন। তারপর তাঁর হাত-পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। কারণ জানতে চাইলে নিবেদিতাকে স্বামীজি বলেছিলেন (Quotes Of Swami Vivekananda), ‘‘যিশুখ্রিস্ট এমনটাই করেছিলেন, তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে।’’ অবাক ভগিনী নিবেদিতা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘সে তো একেবারে তাঁর শেষ সময়ে।’’ এর উত্তরে সামান্য হেসে স্বামীজি বলেছিলেন, ‘সিলি গার্ল’।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours