মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাজস্থান। মরুভূমির দেশ, হাভেলির দেশ, রঙিন রাজ্য আর স্বাধীনচেতা বীরদের রাজ্য। এই রুক্ষ মরু আর ইতিহাসের গন্ধে ভরা রাজ্যেরই একমাত্র হিল স্টেশন 'মাউন্ট আবু'। পৌরাণিক মতে, হিমালয়পুত্র অর্বুদের নাম থেকেই এই 'আবু' নামটি এসেছে (Mount Abu)। আরাবল্লী পর্বতমালার একেবারে দক্ষিণে অবস্থিত এই মাউন্ট আবু বিখ্যাত এখানকার মনোরম আবহাওয়া আর অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য। শুধু তাই-ই নয়, বিশ্ববিখ্যাত জৈন মন্দির 'দিলওয়ারা' এই স্থানকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে।
দিলওয়ারা মন্দির! (Mount Abu)
মাউন্ট আবু থেকে সামান্য দূরে এই দিলওয়ারা মন্দিরের অবস্থান। ১১ শো থেকে ১৩ শো শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত এই জৈন মন্দিরটি হল মাউন্ট আবুর অন্যতম সেরা আকর্ষণ। অনেকগুলি মন্দিরের সমাহার এই দিলওয়ারা টেম্পল। এর মধ্যে ১০৩১ সালে তদানীন্তন গুজরাটের শাসকদের অমাত্য বিমল শাহ নামের এক ব্যবসায়ীর তৈরি 'বিমল বসাহি' মন্দিরটি প্রথম জৈন তীর্থঙ্করের নামে উৎসর্গীকৃত। ১২৩১ সালে বাস্তুপাল এবং তেজপাল, গুজরাটের শাসক রাজা বীর ধবলের মন্ত্রী দুই ভাইয়ের তৈরি লুন বসাহি মন্দিরটি ২২ তম তীর্থঙ্কর নেমিনাথের নামে উৎসর্গীকৃত। এমন আরও ছোট-বড় ৫২টি মন্দির আছে এখানে। প্রত্যেক মন্দিরে একজন করে জৈন তীর্থঙ্কররের মূর্তি আছে। মূল মন্দিরে রয়েছে ঋষভনাথের মূর্তি। শ্বেত পাথরের অপরূপ শিল্পশৈলীতে গড়া এই মন্দির সত্যিই এক অবাক করার মতো সৃষ্টি। উল্লেখ্য, ব্রহ্ম কুমারীর সদর দফতরও এই মাউন্ট আবুতেই।
নক্কি লেক
মাউন্ট আবুর পরবর্তী আকর্ষণ অবশ্যই নক্কি লেক। শহরের প্রাণকেন্দ্রে (Mount Abu) অবস্থিত চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা ছবির মতো সুন্দর এক লেক। প্রচলিত বিশ্বাস, ভগবান নাকি নখ দিয়ে খুঁড়ে এই সরোবর সৃষ্টি করেছিলেন। তাই এর নাম নক্কি লেক। প্রসঙ্গত, এই নক্কি লেকই ভারতের একমাত্র কৃত্রিম লেক যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৯০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। লেকের মাঝে ইতিউতি উঁকি মারে ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপ। এই দ্বীপগুলোতে আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন আকারের ও রং-এর পাথর। এরকমই একটি পাথরের নাম ভেক বা ব্যাংপাথর। এরপর চলুন অধর দেবীর মন্দির দর্শনে। কেউ কেউ বলেন এটি নাকি অন্যতম সতীপীঠ। এখানে নাকি সতীর অধর পড়েছিল। একটি বিশাল পাথর কেটে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ৩৬০টি সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছতে হয় দেবী দুর্গার এই মন্দিরে।
দুর্গ, মন্দির, পর্বতশৃঙ্গ (Mount Abu)
অচলগড়-প্রায় ১১ কিমি দূরে রানা কুম্ভ চতুর্দশ খ্রিষ্টাব্দে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। দুর্গের মধ্যে রয়েছে ১৪১২ সালে নির্মিত অচলেশ্বর মহাদেব মন্দির এবং ১৫১৩ সালে নির্মিত কান্তিনাথ জৈন মন্দির। আছে মন্দাকিনী কুণ্ড। গুরুশিখর-১৮ কিমি দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭৭২ মিটার উচ্চতায় গুরুশিখর হল মাউন্ট আবুর সর্বোচ্চ শিখর। এখান থেকে মাউন্ট আবুর চমৎকার দৃশ্যাবলী দেখা যায়। এখানে রয়েছে একটি সুন্দর শিব মন্দির ও দত্তাত্রেয় মন্দির।
যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া
যোধপুর থেকে বাস ছাড়ছে মাউন্ট আবুর (Mount Abu) উদ্দেশে। এছাড়াও বাস আসছে ১৮৫ কিমি দূরের উদয়পুর থেকেও। ট্রেনে এলে নামতে হবে আবু রোড স্টেশনে। এখান থেকে ২৯ কিমি পথ মাউন্ট আবু। যাচ্ছে বাস, শেয়ার ট্যাক্সি প্রভৃতি। সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। এখানে রয়েছে রাজস্থান পর্যটন উন্নয়ন নিগম বা RTDC-র হোটেল শিখর (ফোন (০২৯৭৪) ২৩৮৯৪৪। এছাড়াও মাউন্ট আবুতে থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে বহু বেসরকারি হোটেল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours