মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ঢাকঢোল পিটিয়ে বালুরঘাট এয়ারপোর্টের পুনর্গঠন ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। কাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের পর দীর্ঘ ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বালুরঘাট বিমানবন্দরের বিমান পরিষেবা চালু হয়নি আজ পর্যন্ত। তড়িঘড়ি সীমানা প্রাচীর, রানওয়ে, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এয়ার ট্রাফিক, পাইলটদের রেস্ট রুম, রেস্তুরাঁ, রিপ্লেসমেন্ট কাউন্টার সহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক মানের জিনিস তৈরি করা হয়। পাশাপাশি ১৩৭৫ মিটার রানওয়েকে বাড়িয়ে ১৪৯৫ মিটার করা হয়। কিন্তু আধুনিক মানের এই সমস্ত জিনিসপত্র তৈরি করেও বর্তমানে এয়ারপোর্টের রানওয়ে ছাড়া বাকি অংশ ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। উন্নয়নের খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যস্তর থেকে একাধিক বার বালুরঘাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে এসেছেন আধিকারিকেরা। পরিবহণমন্ত্রী ঘুরে গিয়েছেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও বালুরঘাটে গিয়েছিলেন, কিন্তু কাজ শুরু করা যায়নি।
বিমানবন্দর পড়ে আছে সেই তিমিরেই
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া বালুরঘাট বিমানবন্দরটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। এক সময় এই বিমানবন্দর মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এখন থেকে বিমান চলাচল করেনি। সরকারের সদিচ্ছার অভাবে তা হয়নি বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এরপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নেন বিমান পরিষেবা চালু করার। তার ফলস্বরূপ ২০১৬ সালের প্রথম দিকে থেকে ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দে বিমানবন্দরের কাজ শুরু হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো পূর্ত দফতর ওই কাজ শুরু করে। বড় মাপের বিমান এখান থেকে চলতে না পারলেও সব ধরনের প্রপেলার চালিত বিমান এখান থেকে চলতে পারবে।
বালুরঘাট শহর লাগোয়া মাহিনগর এলাকায় অবস্থিত রয়েছে বালুরঘাট বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের প্রায় ১৫২ একর জমির উপরে দুই কিলোমিটার রানওয়ে তৈরি করা হয় বিমান নামা ও ওঠার জন্য। দু-একবার পরীক্ষামূলকভাবে বিমান ওঠানামা করলেও এই পরিষেবা চালু হয়নি আজও। এখনও বালুরঘাট বিমানবন্দর পড়ে আছে সেই তিমিরেই। কাজ এতটুকুও এগোয়নি। বিমানবন্দরের রানওয়ে বাদ দিয়ে বাকি এলাকা এখন ঘন জঙ্গলে পূর্ণ। বড় বড় গাছ উঠেছে রানওয়ের পাশে। বড় ঘাসে ঢেকেছে বাকি এলাকা। জঙ্গলের পরিচর্যা না হওয়ায় তা সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়ের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তাই দিনের বেলাতেও অনেকে সেখানে ঢুকতে ভয় পান।
এই বিষয়ে বালুরঘাটের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের বালুরঘাটের বিমানবন্দরটি বহুদিনের পুরনো। আগে এখানে বিমান নামত। তারপর বিমান নামা বন্ধ হয়ে যাওয়াই পরে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরটি চালু করার উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বিমানবন্দরের কাজ শেষ হওয়ার পরেও আজ অব্দি বালুরঘাটে কোনও বিমানের ব্যবস্থা হল না। বরং সাজানো গোছানো পুরো বিমানবন্দরটা জঙ্গলে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আমরা চাই বালুরঘাটে বিমান ব্যবস্থা চালু হোক।
সংস্কারের নামে শুধু কাটমানি?
এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, তৃণমূল সরকারের কাজ শুধু ভাঁওতাবাজি দেওয়া। বিমানবন্দর নিয়েও জেলাবাসীকে ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে। বিমান চালানোর সদিচ্ছাই নেই সরকারের। সংস্কারের নামে শুধু কাটমানি খেয়েছে তৃণমূল নেতারা। কয়েক কোটি টাকা দিয়ে সংস্কার করা বিমানবন্দরের সম্পত্তি বর্তমানে নষ্ট হচ্ছে। এনিয়ে আগেও আমরা আন্দোলন করেছি, আগামীদিনেও করব।'
আশা দেখিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল ও সরকার
তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি সুভাষ চাকি বলেন, 'বালুরঘাট বিমানবন্দর চালুর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের অজানা কিছু অজুহাত আর গাফিলতিতে বিমান চলাচল করছে না। তৃণমূল ভাঁওতা দেয় না। কোচবিহার বিমানবন্দর ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। ভাঁওতা তো দেয় বিজেপি! এবিষয়ে জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, বালুরঘাট বিমানবন্দর চালুর জন্য তৈরি। এখানে বিমান চলাচলের অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। ভালো রানওয়ে আছে। রাজ্য সরকার এই বিমানবন্দর চালুর জন্য আগ্রহী। পরিবহণ দফতর ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে পরিবহণ দফতরের তরফে বিমানবন্দর পরিদর্শন করা হবে। কয়েক মাসের মধ্যে বালুরঘাট বিমানবন্দরে উড়ান চালুর পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যাবে।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours