মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে গত ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লি অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের (TMC) সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের এই কর্মসূচিকে ঘিরে একপ্রস্থ নাটকেরও সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। টাকা আদায়ের দাবিতে মিডিয়া হাইপ তুলতে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর অফিসে বিক্ষোভ অবস্থানেও বসে পড়েন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলের এহেন আচরণে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। রাজ্যের দুর্নীতি ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন ধর্না? এ প্রশ্ন এখন দানা বাঁধছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন অজস্র প্রকল্প রয়েছে, যেগুলি বাস্তবায়িত করতেই পারেনি তৃণমূল সরকার, এমনটাই প্রকাশ পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক রিপোর্টে। আবার অজস্র কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাজ্য সরকার নিজেদের পছন্দমতো নামকরণ করেছে, যাতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো যায়! এভাবে সত্যিই কি কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যের হয়ে যায়!
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে রাজ্য সরকার নাম পরিবর্তন করে বানিয়েছে বাংলার আবাস যোজনা। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা হয়েছে বাংলার আত্মনির্ভর গ্যাস যোজনা। প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনাকে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করে করেছেন বাংলার আজন্ম জীবন বিমা যোজনা। বাংলার কৃষক বন্ধু নামে যে প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার, তা আসলে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা। আবার দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা নাম পরিবর্তন করে রাজ্য সরকার করেছে বাংলার কৃষি বিমা যোজনা। জনমুখী কর্মসূচিগুলির সমস্ত কৃতিত্ব নিতেই রাজ্য সরকারের এমন আচরণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। স্বচ্ছ ভারত মিশন তাই বদলে হয়েছে নির্মল বাংলা। কেন্দ্রীয় প্রকল্প বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও যোজনা হয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম রাজ্যের সৌজন্যতায় এখন হয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন এখন রাজ্যের নাম পরিবর্তনের ফলে খাদ্য সাথী প্রকল্প। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা নাম বদলে হয়েছে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প। প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে টাকার দাবিতে ধর্না দিতে যাচ্ছেন শাসক দলের (TMC) নেতারা। অথচ কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে রাজ্য সরকারের প্রকল্প বলে চালাচ্ছে রাজ্য। এটি দ্বিচারিতা নয়?
বহু প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ রাজ্য, বঞ্চিত পরিযায়ী শ্রমিকরাও
সম্প্রতি নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের তরফ থেকে লোকসভায় একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, পোষণ অভিযান, যা কিনা কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প যার মাধ্যমে সদ্যোজাত শিশু এবং মায়েদের পুষ্টির চাহিদা মেটানো হয়। এতে ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের টাকা কোনওভাবেই বাস্তবায়ন করতে পারেনি রাজ্য। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ভয়া ফান্ডেরও কোনও রকম বাস্তবায়ন করতে পারেনি রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী লকডাউনের সময়কালে পরিযায়ী শ্রমিকদের ডেটাবেস সমস্ত রাজ্য দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনও ডেটাবেসই তৈরি করেনি। একেক সময়ে একেক রকম দাবি করছেন তৃণমূলের (TMC) নেতৃত্ব। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে ১০ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে রাজ্যে। তার থেকে এক লাখ বাড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সংখ্যা ১১ লাখ। অর্থাৎ এখান থেকেই পরিষ্কার যে নির্দিষ্ট কোনও ডেটাবেস না থাকাতেই শাসক দলের নেতৃত্ব একেক সময় একেক রকম বিবৃতি দিচ্ছেন। কোনও রকমের ডেটাবেস না থাকার কারণে আদতে যাঁরা সত্যিকারের পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ডেটাবেস না দিতে পারার কারণেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বাইরে রাখা হয়েছে গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনা, এই প্রকল্প থেকে। কেন্দ্রীয় সরকারের জনমূখী এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন জীবিকার চাহিদা মেটানো হয়। বর্তমানে সারা দেশের ১১৬টি জেলা থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক এই প্রকল্পের সহায়তা পেয়েছেন।
গ্রামীণ পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যর্থ রাজ্য
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অধীনে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ রাজ্যে মোট ২,৫২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হওয়ার কথা। এখানেই সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ রাজ্য। এই সময়ের মধ্যে এক কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের কাজও হয়নি। অন্যদিকে তৃণমূলের (TMC) নেতারা যে দাবি করে থাকেন যে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারা দেশে তাঁরা অনেক রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন! বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো ছবি। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট বলছে, এ দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়নের দিক থেকে কেরল, তেলঙ্গানা, গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours