মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যত দিন যাচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে হকারের সংখ্যা। এর ফলে ক্রমশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে হাওড়া (Howrah) স্টেশনে যাওয়ার প্রধান রাস্তা। হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাস স্ট্যান্ড থেকে হকারের দৌরাত্ম্য কমাতে হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সেই অভিযানের সময় কয়েক দিন হকার বসা বন্ধ হয়ে গেলেও তারপর দু-চার দিন যেতে না যেতেই ফের জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে হাজির হয় হকাররা। ফলে সাধারণ রেলযাত্রীদের কাছে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এবং স্টেশনে ঢোকার সাবওয়ে রীতিমতো যন্ত্রণার যাত্রাপথ হয়ে উঠেছে। হাওড়া বাসস্ট্যান্ড চত্বর এবং সাবওয়ের ভিতরে রাস্তা দখল করে সারি সারি বাজার এবং হকার বসছে বছরের পর বছর ধরে। কখনও দু-একজন যাত্রীর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এই হকারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। কিন্তু কখনই পাকাপাকিভাবে হকার সরে না এই জায়গা থেকে।
পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই ব্যবসা, বলছেন হকাররা (Howrah)
হাওড়া স্টেশনে ঢোকার পথে হকার ঠেলে ঢোকা এক রকম অভ্যাস হয়ে গেছে যাত্রীদের। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে স্টেশন (Howrah) সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে যেসব জায়গায় হকার বসত, তার বাইরেও যেটুকু ফাঁকা অংশ আছে, সেখানেও নতুন নতুন হকারের আমদানি ঘটছে। হকারদের দাবি, তারা পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই এখানে ব্যবসা করে। আবার পুলিশ জানিয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের মদতে হকারদের পুরোপুরি তোলা যায় না। একটা সময় সিপিআইএম নেতা লগনদেও সিংয়ের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড, গঙ্গার ধার, মাছ বাজার এলাকায়। এখন তিনি তৃণমূলে। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড চত্বরে তৈরি হয়ে গেছে বেশ কিছু তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস। হাওড়া বাসস্ট্যান্ডে শরৎচন্দ্রের মূর্তির সামনে বড় তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস তৈরি হয়েছে। হকারদের একাংশ জানিয়েছে, রাজনৈতিক দাদাদের সন্তুষ্ট করে তারা এখানে হকারি করে এবং সামনে পার্টি অফিস থাকায় তাদের উচ্ছেদের ভয় করতে হয় না। মাঝে মধ্যে পুলিশ অভিযান চালালেও তারা দুদিন পরে আবার বসে পড়ে।
কী বলছেন রেলযাত্রীরা (Howrah)?
রেলযাত্রী তুহিন মজুমদার বলেন, অফিস যাওয়ার পথে এবং অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তা চলতে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। ইদানীং দেখা যাচ্ছে কলকাতা থেকে হাওড়াগামী বাসগুলি হাওড়া ব্রিজ থেকে নেমে যাত্রী নামানোর পর সেই যাত্রী গঙ্গার ঘাটের দিকে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের পাশ দিয়ে মূলত হাওড়া স্টেশনে ঢোকেন। কিন্তু স্টেশনে যাওয়ার রাস্তার মাঝখানেই বেশ কিছু ডিম, পাউরুটি, ফল এবং চায়ের দোকান বসে পড়েছে। ফলে সেইসব হকার ঠেলে তাদের হাওড়া (Howrah) স্টেশনে ঢুকতে খুবই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। আরেক যাত্রী গার্গী সাহা জানান, অফিস টাইমে তো পা গলানোর জায়গা পাওয়া যায় না। রাস্তার দু'ধারে হকার বসায় সাধারণ মানুষ অফিস ফেরার সময় সেখান থেকেই কেনাকাটা করে। ফলে ট্রেনের সময় হয়ে গেলেও তাঁরা দ্রুত হাওড়া স্টেশনে পৌঁছাতে পারেন না ক্রেতাদের ঠেলায়। তাই সরকারের উচিত অন্তত স্টেশনে ঢোকার রাস্তায় যাতে হকার না বসে, সেদিকে খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। হাওড়া সিটি পুলিশের দুটি বুথ রয়েছে হাওড়া স্টেশনের সামনে এবং ট্যাক্সিস্ট্যান্ড সংলগ্ন অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে। কিন্তু তারা মূলত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকার ফলে হকারদের দিকে তাদের নজর নেই বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
কী বলছে পুলিশ ও পুরসভা (Howrah)?
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, তারা মাঝে মধ্যেই হকার উচ্ছেদ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই হকাররা ফের বসে পড়ে। হাওড়া পুরসভার বক্তব্য, হাওড়া বাসস্ট্যান্ড চত্বর মূলত কেএমডিএ-র আওতাধীন। ফলে সেখানে পুরসভা সরাসরি কিছু করতে পারে না। এদিকে হাওড়া (Howrah) স্টেশনের বাইরের নিরাপত্তা দেখা বা যাত্রী নিয়ন্ত্রণ যেহেতু হাওড়া সিটি পুলিশের আওতায়, তাই রেল পুলিশও সেখানে কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ফলে সমস্যার কোনও সমাধান তো হয় না, উল্টে সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours