Harmonium: অল ইন্ডিয়া রেডিওতে একসময় হারমোনিয়াম নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কেন তা জানেন?

এত বিতর্কের পরেও হারমোনিয়াম এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র হিসাবেই ব্যবহৃত হয়
Harmonium
Harmonium

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রগুলির মধ্যে সেতার, তবলা, বীণা, সরোদ অন্যতম। হয়তো মাথায় আসতে পারে, আরও একটি প্রধান বাদ্যযন্ত্রও তো আছে, যেটি তালিকা থেকে বাদ গেল। যেটি ছাড়া ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও অসম্পূর্ণ। হ্যাঁ, হারমোনিয়ামের (Harmonium) কথাই বলছি। কিন্তু শুনলে হয়তো একটু অবাক হবেন, হারমোনিয়াম পাশ্চাত্যের একটি বাদ্যযন্ত্র। যার উৎপত্তি বিদেশের মাটিতে। কিন্তু ভারতীয় সঙ্গীতে এটি যেন মিশে গেছে রক্তের মতো।

হারমোনিয়ামের ইতিহাস

হারমোনিয়াম (Harmonium) একটি বিদেশি বাদ্যযন্ত্র, যা ক্যাবিনেট অর্গ্যান’ নামেও পরিচিত। ইউরোপের প্যারিসে ১৮৪২ সালে আলেকজান্ডার ডেবিয়ান এটি আবিষ্কার করেন। সেই হারমোনিয়ামটি ছিল আকৃতিতে অনেক বড় এবং পায়ে পাম্প করতে হত। ১৮৫০ সালের পর ভারতে হাতে পাম্প করা হারমোনিয়ামের উৎপত্তি হয়। 

ভারতে কবে প্রথম ও কীভাবে হারমোনিয়াম আসে?

বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ভারতবর্ষে প্রথম হারমোনিয়াম (Harmonium) ব্যবহৃত হয় কলকাতাতেই। উনিশ শতকের ষাটের দশকে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর সখের থিয়েটার, যা জোড়াসাঁকোতে স্থাপিত, সেখানে প্রথম হারমোনিয়াম বাজান। শোনা যায়, এখান থেকেই উৎসাহ ও কৌতূহল বাড়তে থাকে হারমোনিয়ামের। এরপর থেকেই হারমোনিয়াম শিক্ষা জোরকদমে শুরু হয় ভারতবর্ষে। এমনকী সেই সময় যাঁরা হারমোনিয়াম শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাঁদের জন্য প্রকাশিত হতে থাকে হারমোনিয়াম শিক্ষা সম্পর্কিত নানান বই। সেই সময় এধরনের দুটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলি যথাক্রমে সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর রচিত হারমোনিয়াম সূত্র, যা ১৮৭৪ সালে এবং কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হারমোনিয়াম শিক্ষা, যা ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইগুলিতে সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া আছে হারমোনিয়াম বাদন সম্পর্কে। 

ভারতীয় সঙ্গীতে দশটি শ্রুতি এবং ১২টি স্বর মিলে মোট ২২ টি শ্রুতি আছে। আদিকাল থেকেই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিশারদরা এই শ্রুতিগুলি ব্যবহার করে এসেছেন। কিন্তু পশ্চিমের সঙ্গীতের যে কোনও ধ্বনি সীমাতে ভারতীয় ২২ এর বদলে ১২ রকমের স্বর আছে। যার জন্য এক বিশাল তফাৎ-এর সৃষ্টি হয়। যার ফলে ভারতীয় সঙ্গীতে হারমোনিয়াম ব্যবহার করলে অনেক অসঙ্গতির সৃষ্টি হতে পারে। এই কারণে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ১৯৪০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হারমোনিয়াম নিষিদ্ধ ছিল। 

হারমোনিয়াম এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র

শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হারমোনিয়াম (Harmonium) পছন্দ করতেন না অতটা। ১৯ জানুয়ারি ১৯৪০ তে কবি আকাশবাণী কলকাতার সেই সময়কার স্টেশন ডিরেক্টরকে একটি খোলা চিঠি দেন এবং সেখানে লেখেন, “আমি সর্বদা আমাদের সঙ্গীতজ্ঞদের উদ্দেশে তাদের হারমোনিয়ামের প্রচলিত ব্যবহারের বরাবর বিরুদ্ধে ছিলাম এবং এটি আমাদের আশ্রম থেকেও সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার বন্ধ করা হইয়াছে। আপনি যদি অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্টুডিওতে এটির ব্যবহার বন্ধ করেন তবে আপনি ভারতীয় সংগীতের জন্য একটি খুব সুন্দরতম কাজ করিলেন বলে বিবেচিত হবে।" সেই সময় ব্রিটিশ শাসনের যুগে ব্রিটিশ সঙ্গীতজ্ঞরাও মনে করতেন ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সঙ্গে হারমোনিয়াম কখনও তাল মেলাতে পারে না। পরে স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু, কবির এই সিদ্ধান্ত মেনে চলারই আদেশ বহাল রাখেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দিলীপকুমার রায়, শচীন দেববর্মণের মতো আরও সঙ্গীতজ্ঞ আকাশবাণীতে গান করা বন্ধ করে দেন। বর্তমানে এত বিতর্কের পরেও হারমোনিয়াম এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। এর জনপ্রিয়তা ভবিষ্যতেও কমবে না, এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles