মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাহাড়ি লবণ (Pahadi Salt) বিক্রি করে কোটিপতি হলেন তিন বন্ধু। উত্তরাখণ্ডের সৌরভ পন্থ, যোগেন্দ্র সিং এবং সন্দীপ পান্ডে মিলে শুরু করেন হিমালয়ান ফ্লেভার বা হিমফ্লা স্টার্টআপ (Startup Business)। এরই মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে তাঁরা রফতানি করতে থাকেন বিশেষভাবে তৈরি উত্তরাখণ্ডের ঐতিহ্যগত পাহাড়ি লবণ, এতেই এল সাফল্য। কিন্তু পথ চলাটা শুরু হয় কীভাবে? জানা যায়, উত্তরাখণ্ডের সন্দীপ দিল্লিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। পরবর্তীকালে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে রেস্টুরেন্ট চালাতে শুরু করেন নৈনিতালেই। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাঁর সেই রেস্টুরেন্ট ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
কী বলছেন সন্দীপ পান্ডে (Pahadi Salt)?
এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সন্দীপ বলেন, ‘‘আমি একদিন ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম এবং লক্ষ্য করলাম যে কয়েকজন মহিলা শ্রমিক রুটি খাচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে পেঁয়াজ এবং পাহাড়ি লবণ (Pahadi Salt)।’’ এর পরই সন্দীপ বলেন, ‘‘তাঁরা আমাকে চাপাটি খেতে দিল, এর সঙ্গে ছিল পাহাড়ি লবণ, যা রসুন এবং কাঁচা লঙ্কা মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়েছিল। অত্যন্ত সুস্বাদু ছিল এই পাহাড়ি লবণ। এই লবণ দিয়ে আমি কাঁকড়িও খেলাম। তারপর আমি উপলব্ধি করলাম যে এই লবণই পাহাড়ের খাবারগুলিকে এত সুস্বাদু করে তুলেছে।’’ এরপরে সন্দীপরা দেখেন যে, উত্তরাখণ্ডের বেশিরভাগ মহিলা শ্রমিকই ১০০ দিনের কাজ করেন এবং দৈনিক তাঁদের মজুরি ২৭০ টাকা। ২০১৩ সালের অগাস্ট মাসেই তাঁরা পাহাড়ি লবণের বাণিজ্যিকরণের সিদ্ধান্ত নেন এবং গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থানেরও সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়েই সন্দীপ, তাঁর বাল্যকালের বন্ধু সৌরভ পন্থ ও যোগেন্দ্র সিংয়ের সঙ্গে হিমালয়ান ফ্লেভার (Pahadi Salt) যার সংক্ষিপ্ত হিমফ্লা চালু করেন। মাত্র ১৬০ টাকা দিয়ে শুরু হয় তাঁদের পথ চলা। পরবর্তীকালে যা ছুঁয়ে যায় বহু কোটি টাকার ব্যবসা। ১৬০ টাকা দিয়ে সন্দীপ প্রথমে কিনেছিলেন ধনেপাতা, কাঁচা লঙ্কা এবং একটি শিলবাটা।
কেন তৃপ্তি অনুভব করেন সন্দীপ?
সন্দীপ আরও বলেন, ‘‘আমার বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন কিন্তু যখন আমি আমার পরিবারকে বলি যে আমি লবণ বিক্রি করতে চাই, তখন তাঁরা আমার কথা শুনে হতাশ হয়েছিলেন। আমার আত্মীয়রাও আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন এবং আমাকে ভালো চাকরি করতে বলতেন। কারণ, সেনা পরিবারের সদস্য হওয়ায় আমি যেন মর্যাদাপূর্ণ কিছু করি সেটাই তাঁরা বোঝাতে চেয়েছিলেন। আমি যে লবণ বিক্রি করে আমার এই কথায় তাঁরা কোনও মর্যাদা খুঁজে পাননি। আমার পরিবার ভেবেছিল যে আমি ভুল পথেই যাচ্ছি এবং আমি কোনও পাহাড়ে ভূতের কবলে পড়েছি। একমাত্র তাঁরা তখনই আমার কথায় বিশ্বাস করল যখন আমার কাজ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হল। এদিকে আমার বন্ধুরা যাঁরা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আছেন, তাঁরা বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন কিন্তু এখানে যখন আমি দেখি আমার কাজের মাধ্যমে অনেক মহিলা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তখন আমি খুব তৃপ্তি অনুভব করি।’’
বিশ্বজুড়ে রফতানি (Pahadi Salt)
প্রথমে এই পণ্য বিক্রি করতে সন্দীপ ও তার বন্ধুরা স্থানীয় একটি মেলাতে স্টল দিয়েছিলেন। সন্দীপ নিজেই জানিয়েছেন যে এই পণ্যগুলি (Pahadi Salt) এতই পছন্দ হয়েছিল যে স্টক সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায় এবং স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছ থেকেও দুর্দান্ত সাড়া মিলতে থাকে। পরবর্তীকালে তাঁরা উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানিতে স্টল স্থাপন করেন (Startup Business) এবং ৭ দিনে ২ লাখ টাকার পণ্য তাঁরা বিক্রি করেন। তাঁদের এই কাজ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির শিরোনামেও স্থান পায়। এরপর ধীরে ধীরে তাঁদের বাজার বাড়তে থাকে। হিমালয়ান ফ্লেভারের তৈরি পাহাড়ি লবণ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, দুবাই, জার্মানি সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল সহ বিশ্বব্যাপী রফতানি করা হয়। প্রতিমাসে তাঁরা কুড়ি কুইন্টাল পর্যন্ত লবণ তৈরি করতে পারেন। তাঁদের স্টার্টআপ-এর বর্তমানে বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে দেড় কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, তাঁদের এই ব্যবসার সুবাদে ৮০ জন গ্রামীণ মহিলা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন এবং তাঁদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। এমনই একজন কর্মী দীপা দেবী, যিনি বিগত পাঁচ বছর ধরে হিমালয়ান ফ্লেভারের সঙ্গে যুক্ত, তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি কৃষি কাজ করতাম কিন্তু কর্মসংস্থানের নির্দিষ্ট কিছু ছিল না। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল। তবে আজ আমাদের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে একটা ভালো জায়গা পৌঁছেছে।’’ জানা গিয়েছে, মহিলা শ্রমিকরা এখন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। হিমফ্লার পথ চলা শুরু হয়েছিল ৫টি ফ্লেভার দিয়ে। আজ ৫২ ধরনের ফ্লেভারে পাওয়া যায় হিমফ্লা নুন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours