TMC 21 July: একুশের সমাবেশ রাজনৈতিক না সরকারি অনুষ্ঠান? প্রশাসনিক ব্যস্ততা দেখে উঠছে প্রশ্ন

21 July: রাজ্য প্রশাসনিক কর্তাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে...
633946-tmc-mancha
633946-tmc-mancha

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গোটা বিষয়টা পুরোটাই রাজনৈতিক। কিন্তু শাসক দলের রাজনৈতিক সভা ঘিরে প্রশাসনিক স্তরে যে ব্যস্ততা, যে সাজ সাজ রব লেগেছে, তা তাজ্জব করার মতো। 

বৃহস্পতিবার ঘটা করে একুশের সমাবেশ করছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ইতিমধ্যেই, রাজ্যজুড়ে তার তোড়জোড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে শাসক শিবির। তবে, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দল যে মাতামাতি করবে, যাবতীয় আয়োজন করবে তা বলা বাহুল্য। কিন্তু, একুশের সভা ঘিরে প্রশাসনিক ব্যস্ততা— শাসক দলের ক্ষমতার অপব্যবহারকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল কলকাতা পুলিশের 'ASL Meeting'-কে ঘিরে। কী এই ASL বৈঠক? পুরো অর্থ, অ্যাডভান্সড সিকিউরিটি লিয়াজোঁ। কোনও ভিভিআইপি, সাধারণত প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সফরের আগে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আগে গিয়ে সফরস্থলের ময়না করে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে এবং গোটা এলাকা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করে।

কিন্তু, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে চলা দলীয় সুপ্রিমোর নিরাপত্তার জন্য সম্প্রতি হেয়ার স্ট্রিট থানায় বসেছিল এধরনের এএসএল বৈঠক। তৃণমূলের সাফাই, সাম্প্রতিককালে মমতার (Mamata) বাসভবনে ঢুকে পড়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি পাকড়াও হওয়ার পরই তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, প্রশ্ন হল, প্রকাশ্য জনসমাবেশের ক্ষেত্রে এধরনের বৈঠকের তাৎপর্য কী?

আরও পড়ুন: হাসপাতালগুলিতে মজুত রাখতে হবে রক্ত! ২১ জুলাইয়ের আগে সরকারি নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক

শুধু যে মমতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের রাতের ঘুম উড়েছে তা নয়। এখন শাসক দলের কর্মসূচিকে সফল করতে কোনও কসুর রাখছেন না কর্তাব্যক্তিরা। তার প্রমাণ মিলল রাজ্যের পূর্ত দফতরকে লেখা পুরসচিবের চিঠি। সেখানে অনুষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় আলো বসানোর জন্য বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কী কী করতে হবে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকাও দেওয়া হয়েছে। 

আবার, শহরের যে এলাকায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সভা করার অনুমতি দেয় না পুলিশ, সেখানেই তৃণমূলের সমাবেশের কথা মাথায় রেখে কলকাতা পুলিশের তরফে পুরসভার কাছে পাঠানো হয়েছে একগুচ্ছ প্রস্তাব ও আবেদন। তাতে বলা হয়েছে— 

কোন কোন জায়গায় পানীয় জলের বন্দোবস্ত রাখতে হবে। 

কোন কোন জায়গায় গাছ কাটতে হবে।

কোন কোন জায়গায় ডাস্টবিন রাখতে হবে।

কোথায় ড্রেন পরিষ্কার করতে হবে।

কোথায় খোলা তার রয়েছে, যাতে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ধর্মতলার সিইএসসি দফতর ও কেসি দাসের মধ্যবর্তী স্থলে রাস্তার মাঝে থাকা সব রেলিং তুলে দিতে হবে। মঞ্চে ড্রাই স্যানিটাইজেশন করতে হবে।

আরও পড়ুন: মমতা আদিবাসী বিরোধী? পোস্টার সাঁটিয়ে প্রমাণ বঙ্গ বিজেপি-র 

মঞ্চমুখী একাধিক রাস্তা স্যানিটাইজ করতে হবে। পাশাপাশি, সমর্থকরা যেখানে থাকবেন, তার প্রত্যেকটিতে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

পাশাপাশি, শাসক দলের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের তরফে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্তও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী, ২১ তারিখ শহরের একাধিক ব্যস্ত রাজপথ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে শুরু করে বিধান সরণী, কলেজ স্ট্রিট, ব্রেবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, বেন্টিং স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণী প্রভৃতিতে ভোর চারটে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। আবার পুর ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকরা যাতে সঠিকমতো নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তার জন্য পুরসচিবের তরফে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিরোধীদের বলছে, ক্ষমতায় থেকে সরকারি অর্থের অপচয় ও পরিকাঠামোর অপব্যবহারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ এর চেয়ে আর কি-ই বা হতে পারে! একুশের সমাবেশ ঘিরে শাসক দলের এই ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেছেন, "আমরাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এনে এর চেয়েও বড় সভা করি, করবও। সমস্ত আয়োজন দলীয়ভাবেই করা হয়। ২১ জুলাই নিয়ে যেভাবে পুলিশ, প্রশাসন এবং তৃণমূল এক হয়ে গিয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের আর প্রশাসনের উপর কোনও আস্থ থাকবে না। শাসক দল এবং প্রশাসনের মধ্যে সমস্ত বিভাজন রেখা মুছে গিয়েছে। সরকারি অর্থে এবং প্রয়াসে তৃণমূলের সভা সফল করতে নেমেছে পুলিশ। এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন দরকার।"

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles